ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দায়িত্ব সবার, উন্মেষ ঘটুক মানবিকতার

ড. হারুন রশীদ | প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২২

হেমন্তের ফসল কাটা চলছে। কাটাশস্যের নাড়াপুচ্ছে জমতে শুরু করেছে শিশির। ঋতুর পালাবদল ঘটে প্রকৃতির নিয়মেই। ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এখন শীতের আগমনী ধ্বনি। কবির ভাষায়, ‘শীতের হাওয়ায় লাগল কাঁপন আমলকীর ওই ডালে ডালে।’

ষড়ঋতুর এই দেশে একেকটি ঋতু একেক রূপ রং নিয়ে হাজির হয়। অভ্যস্ত মানুষজন প্রকৃতির এই পালাবদলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন খুব সহজেই। যদিও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিস্থিতির কারণে ঋতুর পালাক্রম রক্ষা হচ্ছে না। অর্থাৎ শীতকালে গরম বা গরমকালে শীত পড়ছে। বর্ষায় বৃষ্টির দেখা নেই। আগে যেমন মুষলধারে বর্ষার বৃষ্টি সবকিছুকে ছাপিয়ে-ভাসিয়ে নিয়ে যেত এখন সেটা নেই। এরপরও প্রকৃতির কিছু নিয়ম তো অলঙ্ঘনীয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

প্রত্যেক ঋতুরই আলাদা চরিত্র, বৈশিষ্ট্য আছে। শীতের পরিবর্তনটা যেন একটু বেশি চোখে পড়ে। শীত এলে অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। হেমন্তের ফসল কাটা শেষ হয়। নবান্নের সঙ্গে পিঠাপায়েসের আয়োজন চলে গ্রামাঞ্চলে। নগর-বন্দরেও এখন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সেই পিঠা কেউ খায় ক্ষুধা নিবারণের জন্য। কেউ বা ফেলে আসা গ্রামের টানে স্বজনের ছোঁয়া পায় তাতে।

শীত একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। অন্যদিকে তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। বিশেষ করে দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। এই সময় শীতজনিত নানা রোগব্যাধিও দেখা দেয়। শীতের জন্য আলাদা একটি প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন। এবার শীত আসছে এমন এক সময়ে যখন চলছে করোনা মহামারিকাল। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণের পর থেকেই প্রাণঘাতী (কোভিট-১৯) ভাইরাসটি তার মরণ কামড় দিয়েই যাচ্ছে। এখনো যাওয়ার কোনো নাম নেই। শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৩১ জন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২২ নভেম্বর পর্যন্ত) ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২৩ জন। এ নিয়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৪১৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারও মৃত্যুর খবর নেই। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে থেকে সেরে উঠেছেন ১৩৬ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮ জনে। সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি আছে জেনেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতিও কোনো কাজ দিচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে আর কত প্রাণ গেলে আমরা সচেতন হবো? শীতকালে তো ধুলোবালির অত্যাচার থেকে বাঁচতেও মাস্ক পরা জরুরি।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে করোনা মহামারির মধ্যেও হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। এ যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।’ জাগো নিউজের রিপোর্ট বলছে, সোমবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫১৫ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ২৬৬ এবং ঢাকার বাইরে ৩৪৯ জন।

নতুন আক্রান্তসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩১ জনে। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত তিনজনসহ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৩৭ জন। এ বছর ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা সচেতনতার কথা বলছেন। বিশেষ করে রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এডিস নামক যে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় সেই মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় খোলা পাত্রে জমে থামা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি, টায়ার, ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা অথবা পানির চৌবাচ্চায় এই মশা নির্বিচারে বংশ বিস্তার করে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। এজন্য নিজেদের সচেতন হতে হবে কর্তৃপক্ষীয় দায়িত্বের পাশাপাশি। দুঃখজনক হচ্ছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। এমনকি ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নিধনেও নেই সাফল্যের কোনো খবর।

এছাড়া শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতোমধ্যে জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলও বিঘ্নিত হয়। এজন্য সতর্কবার্তা জারি করা উচিত। এ সময় শৈত্যপ্রবাহেরও আশঙ্কা থাকে।

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পরিবর্তন হবে। এটাই স্বাভাবিক। এজন্য প্রতিটি ঋতুই যেন উপভোগ করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরি। শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হবে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শুধু সরকার নয় সমাজের বিত্তবানরা এজন্য এগিয়ে আসতে পারেন। কবি সুকান্ত যেমন করে সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য’ তেমনিভাবে আমাদের মধ্যে এই শীতে মানবিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। আর তখনই শীত কষ্টের ঋতু না হয়ে উৎসবের ঋতু হয়ে উঠবে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর, জাগো নিউজ।
drharun.press@gmail.com

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন