ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সংসদে একই প্রশ্ন একই উত্তর মাঝখানে দুই বছর!!

প্রকাশিত: ০৩:৫১ এএম, ০২ মার্চ ২০১৬

মহান জাতীয় সংসদে মাননীয় সংসদ সদস্যদের প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্য দিয়ে একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাই প্রচলন করা হয়েছে। আর সেই ব্যবস্থাটিকে আরো শক্তিশালী করেছে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চালুর মধ্য দিয়ে। সপ্তম জাতীয় সংসদে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বটি প্রাণবন্তও হয় বটে। বিশেষ করে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ থাকায় অনেক সময় সংসদ সদস্যরা তাৎক্ষণিক প্রশ্ন করে মন্ত্রীদের বেকায়দায় ফেলে দিতে পারেন। সংসদ সদস্যদের প্রশ্ন করতে হলে কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ১৫ দিন আগে নোটিশ করতে হয়। অর্থাৎ লিখিতভাবে তা করতে হয়। তার মানে প্রশ্নকর্তা ওই বিষয়ে জেনেশুনেই প্রশ্ন করেন।

সংসদে কিভাবে প্রশ্ন করতে হয় সে বিষয়ে জ্ঞান বিতরণের উদ্দেশ্য আমার আলোচনার বিষয় নয়। বরং সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় সংসদে কি শুধু প্রশ্ন করা আর এর উত্তর দেয়ার মধ্যেই প্রশ্নোত্তর পর্বটি সীমাবদ্ধ থাকবে। যেমন কোনো সংসদ সদস্য যদি প্রশ্ন করেন বাংলাদেশে কতো মানুষ দুবেলা খেতে পায় না? সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী উত্তর দিলেন অত লাখ বা অত কোটি মানুষ দুবেলা খেতে পারে না। সম্পূরক প্রশ্ন যদি আসে সরকার তাদের ভরণপোষণের কী ব্যবস্থা নিয়েছে। তখন হয়তো বিশাল এক ফিরিস্তি দিয়ে দিবেন মন্ত্রী মহাশয়। সংসদের বাইরে প্রশ্ন হলো মন্ত্রী কি এই উত্তর দিয়েই তার দায়িত্ব পালন শেষ করবেন? কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন আদৌ হবে কীনা সেটি কে দেখবে? এই কাজটিও কি সংসদের নয়?

এই গত রোববার জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেছেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ৩২১টি ভবন চিহ্নিত করেছে। এর তালিকা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়েছে। আবারো প্রশ্ন জাগে ওই তালিকা দিয়ে সিটি করপোরেশনগুলো কী করবে?

প্রায় দুবছর আগে ২০১৪ সালের ১৫ জুন এই সংসদেই এই একই মন্ত্রী আরেকজন সংসদ সদস্য, নুরুল ইসলামের (সুজন) এক প্রশ্নের জবাবে একই কথা বলেছিলেন। তখন অবশ্য তিনি বলেছিলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ঢাকা মহানগরের ৩২১ ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে তার তালিকা ঢাকা সিটি করপোরেশনে পাঠিয়েছে। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ২০১৪ এর জুন থেকে ২০১৬ এর ফেব্রুয়ারি ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে সিটি করপোরেশন কী করেছে? সংসদে এ প্রশ্ন নেই!

তবে এরমধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রং দিয়ে চিহ্নিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিল্ডিংকোড হালনাগাদ করে তা বাস্তবায়নে ‘কঠোর’ অবস্থান নিতে রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনকে বিশেষ রং দিয়ে চিহ্নিত করে তাতে  ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ সাইনবোর্ড টাঙাতে সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

কয়েক বছর আগেই ৩২১টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে রাজউক। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৩৯টি, জরাজীর্ণ ৭৫টি এবং ২১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৬ ভবন মালিককে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে রাজউক। তারপর কী হয়েছে? এ প্রশ্নেরও কোনো জবাব নেই।

তবে কেন এসব ভবন উচ্ছেদ করা হয়নি? সংসদে ওই প্রশ্নও নেই, উত্তরও নেই। হ্যা, উত্তর আছে গণমাধ্যমে। রাজউক বলছে এ বিষয়ে দায়ভার তাদের একার নয়। স্থানীয় সরকার আইন বলা আছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করবে সিটি করপোরেশন। রাজউকের কথা বুঝলাম তারা ওসব ভবন ভাঙতে পারবে না। দায় তাদের না। কিন্তু একেকটি বহুতল ভবন কি এক রাতেই তৈরি হয়ে গেছে? রাজউক ঘুম থেকে উঠে দেখেছে বহুতল ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে? তাদের নাকের ডগায় যখন অনুমতি ছাড়া ভবনগুলো নির্মাণ করা হয় তখন তারা কোথায় ছিল? সংসদে এ প্রশ্ন করবে কে? জবাব দিবে কে?

সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন-মালিকদের চিঠি দিলেও কোনো ভবন-মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার এখতিয়ার কার, তা নির্ধারণ করতে তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠিও দিয়েছে। তারা বলছে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনের নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে সব নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব রাজউকের। তারাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার আইনি অধিকার রাখে। স্থানীয় সরকার আইনে সিটি করপোরেশনকে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে রাজউককেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাজউক দেখাচ্ছে স্থানীয় সরকার আইন আর সিটি করপোরেশন দেখাচ্ছে ইমারত নির্মাণ আইন। এই আইন দুটিই সংসদে পাস হয়েছে। আইনের ঠেলাঠেলিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আরো ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। এখন সেগুলোর কোনোটি ধসে পড়লে দায় নিবে কে? বোধকরি সংসদে এই প্রশ্ন করা হবে না। প্রশ্ন করলেও কার্যকর জবাব পাওয়া যাবে না।

তাহলে আমরা ঢাকাবাসী এখন কী করবো? দুঃখিত প্রশ্ন করা যাবে না। আসুন আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ঝুঁকিতে থাকি। কখনো একটি ভবন ভেঙ্গে পড়লে সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপিত হতেও পারে। আর তখন কেউ প্রশ্ন করলে বোধ করি মাননীয়  গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী জবাবে বলবেন রাজধানী ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা একটি কমে এখন ৩২০!

pintu

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন