ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ০৩:৪২ এএম, ২০ মার্চ ২০১৬

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যতিক্রমী। এর কারণ প্রায় সবক্ষেত্রেই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগেই জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে ভবন নির্মাণ তথা অবকাঠামোগত বিষয়াবলি নিশ্চিত করার পরই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এই ধারাবাহিকতা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ছিল জগন্নাথ কলেজ। এই কলেজকে ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়।

২০১৩ সালের ২০ মার্চ আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছি। এসময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য অনেক কাজই সম্পন্ন হয়েছে। তিন বছর আগে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার পর আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে প্রধান সমস্যা হিসেবে গণ্য করি। কলেজ থেকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়, তখন কেবল কলেজের পুরানো কিছু ভবন, আসবাব, বইপত্র, এর সাথে কিছু শিক্ষার্থী-শিক্ষক আর কলেজ সংস্কৃতিই এখানে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষক থাকার কারণে তাদের পঠন-পাঠন এবং সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় এক ধরনের কলেজের ছোঁয়া ছিল। পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুটিত হয়, তার রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয় আমি যোগদানের আগে থেকেই, তবে গতি ছিল মন্থর। শিক্ষার্থী-শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত তিন বছরে সে অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে কলেজের সংস্কৃতি থেকে আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০০৫ সাল বা তার আগে থেকে যারা কলেজের শিক্ষক ছিলেন, তাদের কয়েকজন বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন, তারা অকপটে স্বীকার করেন আমরা কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরণ করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় বিষয়, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পূরণের পথে ধাবিত হচ্ছে। উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার জন্য আমি সাধ্যমত চেষ্টা করছি।

দুই.
কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বড় পার্থক্য হচ্ছে, কলেজে কেবল জ্ঞান বিতরণ করে অর্থাৎ পাঠদান করা হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল জ্ঞান বিতরণ নয়, জ্ঞান অনুসন্ধান ও আহরণ করতে হয়। জ্ঞান আহরণের বিষয়টা একান্তই গবেষণার ওপর নির্ভরশীল। গবেষণা ছাড়া নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কোনো সুযোগ নাই। গবেষণার কাজটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা একাডেমিক আদলে প্রচলিত। বর্তমানে এই জ্ঞান আহরণের কাজটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমান তালে হচ্ছে। গবেষণা কর্মকাণ্ড বলতে যা বোঝায় তা আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। গত তিন বছরে আমরা এই সব গবেষণা কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে দাঁড় করিয়েছি। এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। এই সব প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করছে এবং শিক্ষকরা তাদের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্মকাণ্ড চালু হয়। ইতোমধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে প্রায় একশ শিক্ষার্থী কাজ করছেন। এর বাইরেও শিক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই গবেষণা কর্মকাণ্ডের কয়েকটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকিগুলো সমাপ্তির পথে রয়েছে। পাইপ লাইনে আরো কতকগুলো গবেষণা কর্ম পরিচালনার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষকদের বাইরে যাচ্ছেন এবং ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসছেন, ফলে জগন্নাথের একাডেমিক পরিবেশ ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন নির্ভর করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মানের উপর। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত। ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে। দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাচ্ছি। কারণ আমাদের ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে ডিজিটাল জালিয়াতীসহ যে ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো ছিল, সেগুলো বিভিন্নভাবে আমরা উত্তরণ ঘটিয়েছি। অনেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে অনুকরণীয়ও বলেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে জানছে এবং শিখছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি খুবই কার্যকর তার প্রমাণ মিলছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকটি ব্যাচ বের হয়ে চাকরি করছে। বিসিএস পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকেরই। এদিক থেকেও ভাল অবস্থানে জগন্নাথ।  

 তিন.
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় বিষয়- একাডেমিক ডেভেলপমেন্ট, শিক্ষকদের সংখ্যা সেটা ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল শিক্ষকের সংখ্যা নিয়ে। তিন বছর আগে আমি যখন উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো বিভাগে দুইজন তিনজন শিক্ষকও ছিলেন। অনেক শিক্ষার্থী কিন্তু শিক্ষক চারজন। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের অনুপাতটি একেবারেই অসামঞ্জ্যপূর্ণ ছিল। সেক্ষেত্রে আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা বাড়িয়েছি। এখন প্রায় ৫৭০ জনের মতো শিক্ষক রয়েছেন। তিন বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০ জন।  

আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সবচেয়ে মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্নরাই এখানে শিক্ষক হিসেবে আছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন কম পরিচিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। দিনদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশে পরিচিতি এবং সুনাম অর্জন করছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর বুকে দ্বিতীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষক হওয়ার জন্য বা শিক্ষকতা করার জন্য পছন্দের তালিকায় প্রথম দুই তিনটির মধ্যে এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমাদের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ১৮ জন শিক্ষকের মধ্যে নয়জনের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। বাকি ছয়জন এখন পিএইচডি ডিগ্রি করছেন। এই একই অবস্থা রসায়ন বিভাগে বিরাজ করছে।

অনেক বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রিধারীরাই নতুন শিক্ষক হচ্ছেন। যারা নতুন তাদের রেজাল্ট ভালো। এতে তারা সহজে স্কলারশিপ পাচ্ছেন। প্রায় একশ জনের মতো শিক্ষক এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, কোরিয়া, জাপান এবং চীনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করছেন। অনেকে ডিগ্রি অর্জন করে ফিরে এসেছেন। কাজেই এখন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মধ্যে ভালো মিথষ্ক্রিয়া হচ্ছে এবং হবে। ভালো ডিগ্রিধারী শিক্ষক এবং মেধাবী শিক্ষার্থী- এই দুইটি বিষয়ে যখন সম্মিলন ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে, তখন আমরা আশা করবো নিঃসন্দেহে আমাদের শিক্ষার মান বাড়ছে। শিক্ষার মান নিয়ে যারা দ্বিধান্বিত বোধ করেন, এতে করে আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারবো। সবদিক থেকে একাডেমিক মান ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। যদিও দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই; তবে একাডেমিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করলে এটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে; জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান আহরণের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করা যেতে পারে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স আছে।    

এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অবকাঠামোগত দিক। এবিষয়ে আমি প্রথমে গুরুত্ব প্রদান করি বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা এবং গবেষণাগারের দিকে। তার পরে রয়েছে শিক্ষকদের বসার জায়গা, শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম। এক্ষেত্রে সমস্যা এখনও রয়েছে। সব সমস্যাই যে অতিক্রম হয়েছে তা বলা যাবে না। কারণ মনে রাখতে হবে আমাদের বড় সমস্যা জায়গার। মাত্র সাড়ে সাত একর জায়গার উপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের জায়গা খুবই সংকীর্ণ। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কক্ষ এবং ল্যাবরেটরি লাগবেই। আমরা প্রথমে উদ্যোগ গ্রহণ করি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ক্যাম্পাসে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করার। যাতে ক্যাম্পাসে সবাই ইন্টারনেট সুবিধা পায়। খুব দ্রæত ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে সবাই যেন বিশ্ব মানের ডিজিটাল লাইব্রেরিতে প্রবেশের সুযোগটা পায়। সেই কাজটি আমরা ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন করেছি। এরই মধ্যে আমরা ই-লাইব্রেরি চালু করেছি। ই-বুক সিস্টেমে চলে যাচ্ছে পুরো গ্রন্থাগার। এখন সকলে বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য খুব সহজেই ওইসব অনলাইনে প্রবেশ ও ডাউনলোড করতে পারেন। তবে লাইব্রেরির জন্য নতুন বই কেনা হয়েছে। লাইব্রেরিটি ই-লাইব্রেরিতে পরিণত হওয়ায় যুগের চাহিদাও পূরণ হয়েছে। এখন পৃথিবীর ২৬টি পাবলিশারের বই সরাসরি শিক্ষার্থীরা পড়তে পাচ্ছে। জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পুরো ক্যাম্পাস শতভাগ দ্রæতগতির ইন্টারনেট সুবিধার মধ্যে চলে আসবে। এতে করে পৃথিবীর যেকোনো লাইব্রেরি এবং প্রকাশনায় প্রবেশ করার মহাসড়কে আমরা যুক্ত হবো। এর ফলে আমাদের রিডিং ম্যাটেরিয়াল, তথ্য ও বইয়ের স্বল্পতা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কেটে যাবে।

চার.
গবেষণাগারের উন্নয়নের কাজটি খুবই ব্যয় বহুল। গবেষণার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেগুলোর মূল্য কোটি কোটি টাকা। তারপরও বিশ্বব্যাংকের ‘হেকেপ’ প্রকল্পের আওতায় ফার্মেসী, কম্পিউটার সায়েন্স, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম এবং মাকেটিং বিভাগে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে এবং তার অনেকটাই প্রায় সম্পন্ন। আমাদের রসায়ন এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ল্যাবরেটরি এবং কম্পিউটার সুবিধার উন্নয়নের জন্য ‘হেকেপ’ প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই ল্যাবরেটরিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়াও চলছে। আমরা ল্যাবরেটরি উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। নিজস্ব অর্থায়নে ল্যাবরেটরির যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করা আমাদের সাধ্যের মধ্যে, সেসব যন্ত্রপাতি আমরা আস্তে আস্তে ক্রয় করছি। অর্থাৎ গবেষণা করার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শিক্ষকদের বসার স্থান এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপের একশ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। গত ৫ বছরে এর বাস্তবায়ন ছিল ৫ শতাংশেরও কম। কাজেই এই প্রকল্প বাতিল প্রকল্পের তালিকায় চলে যায়। পুনরায় এই প্রকল্পটিকে আমরা নতুনভাবে পুনঃজীবিত করে, সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়ন করছি। এই প্রকল্পের প্রধান দুইটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি হচ্ছে একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ। এই কাজটি আমরা শুরু করেছি। বর্তমানে একটি ফ্লোর সম্পন্ন হওয়ার পথে। ক্রমান্বয়ে একটির পর আর একটি ফ্লোর নির্মাণ হলে আমাদের ক্লাসরুমের সংকট আর থাকবে না।

পাঁচ.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি চরিত্র হচ্ছে এটি শতভাগ অনাবাসিক। একজন শিক্ষার্থীরও থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী কারো কোনো থাকার ব্যবস্থা নেই। সেদিক থেকে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল মেয়েদের আবাসিক হল নির্মাণ। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখানে আবাসিক সুবিধা নেই। যে এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত অর্থাৎ পুরান ঢাকায় মেয়েদের  নিরাপত্তাসহ স্বাস্থ্যসম্মত থাকার বাড়িঘরের অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেসের সংকট তো আছেই। যার কারণে এখানে ছাত্রীদের সংখ্যা কম। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আবাসনের জন্য আমরা প্রথমে মেয়েদের হল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ২০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামে একটি হল নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। যেখানে এক হাজার ছাত্রী অবস্থান করতে পারবে। পুরো উদ্যমে এই হলের নির্মাণ কাজ চলছে। এই হল নির্মাণ সম্পন্ন হলে কিছুটা হলেও ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা দূর হবে। সরকারের সহযোগিতায় এবং হল পুনরুদ্ধার কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমে বেদখল হওয়া কয়েকটি ছাত্রাবাস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেগুলোর বর্তমান স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। জায়গা কম হওয়ায় সেখানে পূর্ণাঙ্গ ‘হল’ হবে না। কাজেই এগুলোর বিকল্প ব্যবহারের পথ খুঁজছি।

ছয়.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নের জন্য আমরা নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেটা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই বছরের জানুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়েকটি মিটিং করে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এখন ‘একনেকে’ যাবে। আমরা আশা করছি নতুন এই আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হলে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের পথে বড় ধরনের মাইলফলক হবে। এই আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্পে দুই বড় কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি বিশ তলা দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ। বর্তমানে বিজ্ঞান ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ভবনটি ভেঙে সেখানে ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ছাত্রদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হবে। নামকরণের ব্যাপারে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক হাজার ছাত্রের জন্য বড় আবাসিক হল ক্যাম্পাসের আশেপাশে নির্মাণের জন্য জায়গা এবং পরিবেশ নেই। সেজন্য আমরা কেরাণীগঞ্জে নবনির্মিত জেলখানার বিপরীত দিকে ঢাকা মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২৩ বিঘা জমি আমরা ইতোমধ্যে ক্রয় করেছি। আশেপাশের আরো কিছু সরকারি জায়গা মিলে এখন আমরা প্রায় ২৫ বিঘা জমির মালিক। এই জায়গায় ছাত্রদের হল নির্মাণ করা হবে। নতুন আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্পে এই দুইটি কাজ করা হবে। এর বাইরেও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে লাইব্রেরিতে বইয়ের সুবিধাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এতে করে অবকাঠামোগত সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণ ঘটবে।

সাত.
আরও একটি কাজ আমরা করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। যদিও আমাদের পরিসর এবং জায়গার সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনয়নের জন্য এই সব নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন সংগীত, চারুকলা, নাট্যকলা, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন এগুলো সুকুমার কলার সাথে সম্পর্কিত। পুরান ঢাকায় এই সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা আমার লক্ষ্য ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার চিন্তা অনেক আগে থেকেই ছিল। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন বিভাগ চারুকলা, নাট্যকলা, সংগীত, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এসব কোর্স না থাকার কারণে সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছিল। কেবল তাই নয়, এইসব বিভাগ খোলার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন সাধন হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এখন এমন কোনো দিন নেই যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক তথা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের অনুষ্ঠান হয় না। এই সব বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  

অপর একটি চাওয়ার বিষয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিক্ষা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট’ (আইইআর) খোলা। আমাদের এই চাওয়াও পূর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা আইইআর চালু করেছি। এর জন্য একটি ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রয়োজন ছিল। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং পোগোজ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পোগোজ স্কুল এখন পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচালিত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ একীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে আইইআর- এর পরিচালক দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি আইইআর-এ নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং পড়াশুনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। একই সাথে ওই স্কুলে শিক্ষার মানোন্নয়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।

আট.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক হওয়ায় যাতায়াতের জন্য বাসনির্ভর। বাসের তীব্র সংকট একং স্বল্পতা ছিল। আমরা ইতোমধ্যে অনেক রুটে বাস চালু করেছি। শিক্ষকদের বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমি যখন যোগদান করি তখন শিক্ষকদের বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হতো। এখন কোনো শিক্ষক বলতে পারবেন না তাকে সেই ভাবে কষ্ট করে যেতে হচ্ছে। শিক্ষকরা স্বাচ্ছন্দে এবং অনেকে দূরবর্তী স্থানে বাসে বসে যেতে পারছেন। আমাদের বাস এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মাওয়াঘাট, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদী পর্যন্ত যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি আমাদের পরিবহণ ব্যবস্থায় সংকট এখনও রয়েছে এবং তা উন্নত হওয়া দরকার। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো কয়েকবার আসা-যাওয়া করে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে গাড়িগুলো একবার বের হলে যানজটের কারনে দ্বিতীয়বার আর যেতে পারে না। এর একটি সমস্যা হচ্ছে গাড়ি রাখার জায়গার সংকট। গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অন্তরায়। তারপরও পরিবহণে আরো গাড়ি আমরা যুক্ত করবো। অবাসিক সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমাদের পরিবহনকে আরো জোরালো করতে হবে এবং সেই চেষ্টা আমরা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।  

আমরা নতুন বাস কেনার ব্যবস্থা করেছি। ক্রয়কৃত এবং ভাড়ায় নেয়া নতুন কয়েকটি বাস যুক্ত হচ্ছে পরিবহণে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাসের ট্রিপ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশটিরও বেশি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আবাসিক সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিবহণ সুবিধা বৃদ্ধি করা একটি বড় কাজ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো বছর বয়সেও কোনো এ্যাম্বুলেন্স ছিল না। আমরা ইতোমধ্যে একটি এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করেছি। আমাদের ছাত্র শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরি প্রয়োজনে এটি কাজে লাগবে।

আমাদের ক্যাম্পসে নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। যেমন- ডিবেটিং ক্লাব, আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, বাঁধন, উদীচী, সাংবাদিক সমিতি, ফটোগ্রাফি সোসাইটি, রোভার, বিএনসিসিসহ অন্যান্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের কার্যক্রমে আমরা সর্বাত্মকভাবে সাহায্য- সহযোগিতা করে থাকি। প্রায়ই তাদের প্রোাগ্রাম থাকে এবং তাদের কার্যক্রম অত্যন্ত গতিশীল। এদের কার্যক্রমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের গুণাবলি এবং সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করছে।  

নয়.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার বিষয়ে আমাদের বেশি নজর দেয়া দরকার। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগে ‘পরিচালক’ হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসকে নিয়োগ দিয়েছি। নতুন পরিচালকের গবেষণা ও প্রকাশনায় যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি যোগদান করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা কার্যক্রমে হাত দিয়েছেন। কারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্ফুটিত হওয়ার জন্য প্রকাশনা প্রয়োজন। আমরা আর একটি উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের শিক্ষকদের যে সব গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড আছে, সেগুলোর পাণ্ডুলিপি জমা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কয়েকটি পাণ্ডুলিপি পাওয়াও গেছে। এসব পাণ্ডুলিপি আমরা রিভিউয়ের জন্য পাঠাচ্ছি। রিভিউয়ারে অনুকূল মতামত পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা হিসেবে বই আকারে বের করা হবে। যে সব গবেষণা প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ছিল, সেগুলোরও কয়েকটি রিপোর্ট আমরা রিভিউত্তর জন্য প্রেরণ করেছি। সেসব বিষয়ে মতামত পেলে সেগুলোও প্রকাশ করা হবে। প্রত্যেক অনুষদে আমাদের জার্নাল রয়েছে। কতকগুলো বিভাগ স্বউদ্যোগে জার্নাল বের করছে। সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এই সব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রকাশনার মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক চর্চার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে- এমন গবেষণা এবং আর্টিকেলের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে।

দশ.
মুক্তবুদ্ধির চর্চা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ, প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্র হিসেবে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে চাই। সেক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা একত্রে বিভিন্ন সময় নানা প্রোগ্রাম করছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা অনুষ্ঠানে আয়োজন হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রোগ্রাম লেগেই থাকে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। এই এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিনোদনের কেন্দ্র হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এটা আমার স্বপ্ন। আশে-পাশের স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়িক, প্রকাশনা সংস্থা, এমনকি ধর্মীয় সংগঠনগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রোগ্রাম হলে তারা তাতে অংশগ্রহণ করে।  

সম্প্রতি ক্যাম্পাসে এতো ছোট জায়গার মধ্যেও প্রায় ৩২টি মণ্ডপে সরস্বতী পূজা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশের উদ্যাপন হয়েছে। সেখানে পুরান ঢাকার হাজার হাজার লোকের রাত পর্যন্ত সমাগম ছিল। এতে পুরান ঢাকাবাসীর মনের আশা-আকাক্ষা পূরণ হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়েই এক ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধন হচ্ছে।  গতবার ব্যাপক জাঁকজমকভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি। এই বছরও আরো বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি মনে করি এই বছর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমগ্র পুরান ঢাকাকে নেতৃত্ব দিবে। সেখানে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে লোকজনের সমাগম হবে। এ লক্ষ্যে দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান করার বিষয় আমরা চিন্তা করেছি। আশা করছি গতবারের চেয়ে এই বার অনুষ্ঠানে অংশ্রগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান এবং লোকজনের সংখ্যা আরো বাড়বে। দিনব্যাপী একটি মেলারও আয়োজন থাকবে।  

এগার.
শিক্ষার মান বজায় রাখতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাটা জরুরি। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সব সময় সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট, কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে তারা কী ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে, যোগ্যতায় ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে কিনা- এসবই পর্যালোচনা করা দরকার। অবকাঠামো উন্নয়নের নামে দালান-কোঠা বানিয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার স্বপ্ন না দেখে বরং দেশময় কিংবা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে লেখাপড়ার উচ্চ মান; শিক্ষকদের গবেষণা ও প্রকাশনার অভিনবত্ব। গবেষণা ও প্রকাশনা দিয়ে অন্যদের বোঝাতে হবে আমাদের সমুন্নতি। আমি মনে করি উচ্চ মানসম্মত লেখাপড়া, পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়মিতকরণ এবং শিক্ষকদের জ্ঞান অন্বেষী মনোভাব- আপাততঃ এটুকু হলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের একটি অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হবে।   

গত তিন বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কঠিন কাজটি আমরা অতিক্রম করে এসেছি। এখন এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আরো অধিকতর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেসব শর্তের প্রয়োজন আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে তা পূরণ করছি। এক্ষেত্রে সরকার আমাদের যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করছে।   

লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন