ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

গোলাম আযম-নিজামীর পর টানা তৃতীয়বার আমির হচ্ছেন ডা. শফিকুর রহমান!

রায়হান আহমেদ | প্রকাশিত: ১০:০৩ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

 • অক্টোবরের নির্বাচনে আমির ঠিক করবেন রুকনরা
• তিন বছর অন্তর হয় আমির নির্বাচন
• তিনজনের প্যানেল নির্বাচন
• অক্টোবরে নির্বাচন, ডিসেম্বরে ফল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃত্ব ‘আমির’ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে চলতি অক্টোবর মাস থেকে। কে হচ্ছেন পরবর্তী আমির তা নিয়ে চলছে আলোচনা। দলের মধ্যে গুঞ্জন- টানা তৃতীয়বার দলটির শীর্ষ এ পদে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান।

দীর্ঘদিন দলের শীর্ষ দায়িত্ব পালন করার কারণে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার ধারাবাহিক নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে দল। এর আগে জামায়াতে ইসলামীতে টানা তৃতীয়বার আমিরের পদে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক গোলাম আযম এবং মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।

জামায়াতে ইসলামীতে আমির নির্বাচনের বিষয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। এ বিষয়ে কথা হলে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জাগো নিউজকে জানান, দলের আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া মাসব্যাপী চলে। সারাদেশের রুকনদের গোপন ভোটে এ নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়।

অক্টোবর থেকে শুরু, ডিসেম্বরে চূড়ান্ত ফলাফল
চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতি জেলায় রুকন সম্মেলনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে এবং ডিসেম্বরে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নির্বাহী পরিষদের সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সবকিছু একটি চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অন্যবারের মতো এবারও আমির নির্বাচন হবে। এটি একেবারেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গণমাধ্যমে যত আলোচনা হচ্ছে, অভ্যন্তরে এটা সাধারণ বিষয়। নির্বাচন, দায়িত্ব গ্রহণ ও বিদায়—সবই জামায়াতের চিরায়ত প্রক্রিয়ার অংশ।’

আমির নির্বাচনে তিনজনের প্যানেল গঠন
সাধারণত জামায়াতে ইসলামীতে আমির নির্বাচনে তিনজনের একটি প্যানেল গঠন করা হয়। রুকনদের ভোটে তিনজনের মধ্য থেকে একজন নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন
ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য হলে ১০০ আসন ছেড়ে দেবে জামায়াত
আগামী নির্বাচনে আধিপত্যবাদ রুখে দেওয়া হবে: জামায়াত নেতা
আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করার পক্ষে নই: জামায়াত আমির

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক একজন জেলা সভাপতি জাগো নিউজকে বলেন, ডা. শফিকুর রহমান প্যানেলে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়া আছেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ ও মিয়া গোলাম পরওয়ার। এদের মধ্যে যে কোনো দুজন প্যানেলে থাকতে পারেন।

তৃতীয়বার আমির হতে যাচ্ছেন ডা. শফিকুর রহমান
গত দুই দশক ধরে জামায়াতে ইসলামী ও এর রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীতে কোনো নির্বাচনে সাধারণত বর্তমান পদাধিকারী থাকলে রুকনরা অন্য কাউকে ভোট দেন না। এটি জামায়াতের নিয়মিত নীতি। ছাত্রশিবিরের সম্মেলনেও একই ব্যবস্থা দেখা যায়— যিনি সেক্রেটারি থাকেন, পরবর্তীসময়ে সভাপতি হওয়ার জন্য সদস্যরা তাকে ভোট দেন।’

ছাত্রশিবিরের সাবেক ওই সদস্য বলেন, ‘জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করলে বা শারীরিকভাবে হঠাৎ অসুস্থ না হলে, আশা করা যায় তাকেই পরবর্তী আমির হিসেবে দেখা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে এটি একটি স্বাভাবিক নিয়ম। দলীয় মহলে বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানকে নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের প্রতিটি পর্যায়ে তার নেতৃত্বকে ইতিবাচকভাবে নেওয়া হচ্ছে। ৫ আগস্টের আগে ও পরে তার নেতৃত্ব নিয়েও দলের মধ্যে সন্তুষ্টি রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কথা হলে নড়াইল জেলা জামায়াতে ইসলামের আমির আতাউর রহমান বাচ্চু বলেন, ‌‘মুহতারাম আমির ডা. শফিকুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সংগঠন অনেক বেশি গতিশীল ও যুগোপযোগী হয়ে উঠেছে। তিনি শরীরিক ও মানসিকভাবে এখনো ফিট আছেন। সংগঠনের স্বার্থে তাকে আরও কিছুদিন প্রয়োজন। তবে আমাদের ভোট গোপনে দিতে হয়।’

শফিকুর রহমানের আমির পদে দায়িত্বকাল ও পুনর্নির্বাচন
জানা যায়, ডা. শফিকুর রহমান ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামের রুকনদের প্রত্যক্ষ ভোটে আমির নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর তিনি ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য প্রথমবারের মতো শপথ নেন। পরে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয়বার আমির নির্বাচিত হন এবং ১৮ নভেম্বর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য শপথ নেন। বর্তমানে তিনি সংগঠনের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন
জামায়াত-শিবিরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গণঅধিকার ও এনসিপি
অভ্যন্তরীণ সংস্কারে কেন এত মনোযোগী জামায়াত
কূটনীতিকদের আগ্রহে জামায়াত, কী জানতে চাইছেন তারা?

সুস্থ আছেন জামায়াত আমির
গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ডা. শফিকুর রহমান। পরে আগস্ট মাসে বাইপাস সার্জারি শেষে তিনি সুস্থ হয়ে ১২ আগস্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পান। বর্তমানে তিনি বসুন্ধরার কার্যালয় থেকে সীমিত পরিসরে দলের দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সশরীরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমির সাহেব সুস্থ আছেন। তিনি এরই মধ্যে মিরপুর, মগবাজার ও বসুন্ধরা কার্যালয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।’

১৫ বছর পর অনুকূল পরিবেশে জামায়াতের আমির নির্বাচন
জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা জানান, ফ্যাসিবাদী আমলে গত ১২ বছর ধরে দলটিকে গোপনে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। এর আগে প্রতিবারের মতো আমির নির্বাচনও নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জেলা পর্যায়ের রুকন সম্মেলনের মাধ্যমে কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার পরিস্থিতি তুলনামূলক অনুকূল।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা ছাইফ উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমির নির্বাচন আমাদের জন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এবার রুকন সম্মেলন একবারে আড়ম্বরপূর্ণভাবে আয়োজন করা হবে।’

জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দক্ষিণাঞ্চলের (সাংগঠনিক) তত্ত্বাবধায়ক মোবারক হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের আমির নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনারও তিন বছরের জন্য নির্ধারিত। এবার দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ২০২৬, ২০২৭ ও ২০২৮ সালের জন্য নতুন আমির নির্বাচন করা হবে।’

আরও পড়ুন
ফিলিস্তিন যতদিন স্বাধীন না হয়, আমরা তাদের পাশে থাকবো
গাজা মুসলমানদের ঈমান এবং সংস্কৃতির অংশ: আব্দুল হালিম

যেভাবে নির্বাচিত হন জামায়াত আমির
জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা যায়, দলের আমির নির্বাচন একটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন হওয়া গোপন ভোট প্রক্রিয়া। দলটির কাঠামো অনুযায়ী সারাদেশকে ১৪টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, প্রতিটি অঞ্চলের দায়িত্বে থাকেন একজন করে কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধায়ক।

নির্ধারিত সময়ে এসব তত্ত্বাবধায়ক নিজ নিজ অঞ্চলে রুকন সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত রুকনরা (ভোটার সদস্যরা) গোপন ব্যালটে ভোট দেন। ভোটগ্রহণ শেষে তত্ত্বাবধায়করা সিল করা ব্যালট বা ফলাফল কেন্দ্রীয় নির্বাচনি কমিটির কাছে জমা দেন।

কেন্দ্রীয়ভাবে ফলাফল ঘোষণা
সব অঞ্চলের ভোট শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটি ফলাফল সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল তৈরি করা হয়। এরপর দলটির শূরা অধিবেশন (কেন্দ্রীয় বৈঠক) অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত একমাস সময় লাগে। সব অঞ্চলের ভোটগ্রহণ ও ফলাফল একত্র করার পর ডিসেম্বরে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়।

আমির নির্বাচনের পর শূরা নির্বাচন
আমির নির্বাচনের পর পরবর্তী ধাপে কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্যরা নতুন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ গঠন করেন।

ডা. শফিকুর রহমানের রাজনৈতিক যাত্রা
জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ডা. শফিকুর রহমান ১৯৭৭ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগ দেন। পরে তিনি সংগঠনটির সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখা ও সিলেট শহর শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরে সিলেট শহর, জেলা ও মহানগরের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি হন এবং ২০১৬ সালে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন।

আরএএস/এমএএইচ/এএসএ/জেআইএম