চট্টগ্রামে এমপিপ্রার্থীর গণসংযোগে গুলি, ‘সন্ত্রাসী’ বাবলা নিহত
চট্টগ্রামে গুলিতে সরওয়ার বাবলা নামের এক বিএনপিকর্মী নিহত হয়েছেন/ ছবি- ভিডিও থেকে নেওয়া
চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত এমপিপ্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এসময় জনসংযোগে অংশ নেওয়া ১৮ মামলার আসামি ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) গুলিতে নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বায়েজিদ থানার চাইলত্যাতলীতে গণসংযোগকালে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান এ তথ্য জানান।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, মনোনয়ন পেয়ে হামজারবাগ এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন এরশাদ উল্লাহ। এসময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে কারা তাকে গুলি করেছে তাৎক্ষণিকভাবে সে তথ্য জানা যায়নি। এসময় আরও দু-তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানান বিএনপির এক নেতা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল বলেন, নগরীর তিন নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে নির্বাচনি সভা করছিলেন এরশাদ উল্লাহ। সভা শেষ করে তিনি সেখানে একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তিনি হেঁটে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলি করে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। তবে কারা গুলি করেছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গণসংযোগকালে গুলিবিদ্ধ
বিএনপি প্রার্থী নিতাই রায়ের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ
এরশাদ উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। এরশাদ উল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।
একাধিক মামলার আসামি বাবলা
গত কয়েক মাসে একাধিকবার সরোয়ার হোসেন বাবলা নিজে দাবি করেছিলেন, ছোট সাজ্জাদ ও তার ছেলেরা তাকে খুন করার চেষ্টা করছে। তিনি ফেসবুকে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্নার হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘চন্দনপুরায় আমাকে মারতে গিয়ে জোড়া খুন করেছে ওরা।’
চন্দনপুরা থেকে পতেঙ্গা: একাধিক হামলা
চলতি বছরের ২৯ মার্চ গভীর রাতে নগরের চন্দনপুরা এলাকায় সরোয়ার ও তার অনুসারীদের প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা। ওই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন বাবলা। কিন্তু তিনি সে দফায় প্রাণে রক্ষা পেলেও ব্রাশফায়ারে নিহত হন সরোয়ারের দুই অনুসারী কক্সবাজারের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং রাঙ্গুনিয়ার বখতেয়ার উদ্দিন মানিক। এর দুই মাসের মাথায় নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় খুন হন আরেক সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর (৪৪)। আকবর সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং ওই ঘটনার জন্যও সাজ্জাদের অনুসারীদের দায়ী করা হয়।
পটপরিবর্তনের পরই নতুন মেরুকরণ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি খুনসহ অন্তত ১৮টি মামলার আসামি ছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা। একসময় বাবলা শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বিদেশে পলাতক বড় সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। পরে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে সরোয়ার নিজেই একটি সন্ত্রাসী দল গড়ে তোলেন। ২০১১ সালে গ্রেফতারের পর দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। ২০১৭ সালে জামিন পেয়ে কাতারে পালিয়ে যান। সেখান থেকে ফিরলে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিমানবন্দর থেকে আবার গ্রেফতার হন।
প্রায় ৪ বছর পর কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই সরোয়ার আবার গ্রেফতার হন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান বাবলা।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই যুবক চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা।
৫টি খুনসহ অন্তত ১৮ মামলার আসামি সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। ২০১১ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান সরোয়ার হোসেন বাবলা। কারামুক্তির পর থেকে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে বাবলাও চাঁদাবাজি, বালুমহাল ও এলাকা দখল নিয়ে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েন। সরোয়ারের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে নগরীর বায়েজিদ থানা, পাঁচলাইশ থানা, চান্দগাঁও থানা এবং ডবলমুরিং থানায় বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
এমআরএএইচ/কেএসআর/এমআইএইচএস/এএসএম