ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

সাংসারিক ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় অসাধারণ ছিলেন বঙ্গমাতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২০

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে নয়, একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে যিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল শনিবার (৮ আগস্ট) রাতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘গৃহকোণ থেকে জনগণের হৃদয়ে’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।

সাবেক ছাত্র নেতা ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এ আয়োজনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু আলোচনার শুরুতে বঙ্গমাতাকে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করে শোক ও শ্রদ্ধা জানান।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কোনো পিছুটান ছিল না বলেই তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই চলার পথকে মসৃণ করেছিলেন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা। বেগম মুজিবের মধ্যে কিছু ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল, নয়তো যে বয়সে ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়ের কাছে আবদার থাকে, সে বয়সেও বেগম মুজিব বায়না না করে বঙ্গবন্ধুর হাতে তার জমানো টাকা তুলে দিতেন, যাতে বঙ্গবন্ধুর কলকাতায় কষ্ট না হয়। এই যে তার ত্যাগ, সেই ত্যাগের বিনিময়েই বঙ্গবন্ধুর কিন্তু বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা। বঙ্গবন্ধুর জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হিসেবে বেগম মুজিব এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে যেভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছিলেন, তা তার লেখনীর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

বঙ্গমাতার সাথে তার নিজের অনেক ঘটনার কথা উল্লেখ করে আমু বলেন, আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি করতাম সবচেয়ে বেশি তার সান্নিধ্য পেয়েছি, বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাবস্থায় তিনি আমাদের সাহস জুগিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, আর্থিক সাহায়তা দিয়েছিলেন। এমনকি ঈদ করার টাকাও আমাদের দিয়েছিলেন ছাত্র আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ধানমন্ডিতে দুটি বাসায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, এই দুটি বাসায় তিনি গোপনে দেখা করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। তার জমানো টাকা পরিবারের পেছনে খরচ না করে আমাদের মতো ছাত্রনেতাদের দিতেন আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে নেয়ার জন্য। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন একজন মানুষ।

আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি আলোচনার শুরুতে ১৫ আগস্টের কালরাতে নিহত সবার কথা স্মরণ করেন।

বঙ্গমাতার জীবনী নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল বঙ্গমাতাকে দেখার, বাবার সাথে ৩২ নম্বর বাড়ি গিয়েছিলাম একবার। তাকে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম, এত বড় একজন মানুষের স্ত্রী এত সাধারণ হবেন, আমার ধারণাই ছিল না। পরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছ থেকে বঙ্গমাতাকে নিয়ে আমার জানার আরও সুযোগ হয়। তার মধ্যে আদর্শ ছিল, মানবতা ছিল, দেশপ্রেম ছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর চলার পথে কখনো বাধা হননি তিনি, বরং হয়েছেন চলার পথের শক্তি, হয়েছেন প্রেরণা। বঙ্গমাতার জীবনী থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থানের সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরেন। তিনি তার প্রবন্ধে বঙ্গমাতাকে একজন শান্ত, ধীরস্থির, ধৈর্যশীল, সাহসী, প্রজ্ঞাবান, তেজস্বিনী এবং অমায়িক হিসেবে উল্লেখ করেন।

অজয় দাশগুপ্ত জানান, দেশের জন্য তিনি তার দুই সন্তানকে মাতৃভূমি স্বাধীন করার লড়াইয়ে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনে তার সঙ্গে বঙ্গমাতার শতবার দেখা করতে যাওয়ার ঘটনাও প্রবন্ধে উল্লেখ করেন এই সাংবাদিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, পৃথিবীতে কিছু মহীয়সী নারী আছেন যারা একজন মহামানবকে তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন, আমাদের বঙ্গমাতা বেগম মুজিব তাদের মধ্য একজন। বঙ্গবন্ধুর যে তিনখণ্ড আত্মজীবনী বের হয়েছে, সেগুলো লিখতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করেছেন বঙ্গমাতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ড. নাসরীন আহমদ বলেন, আমরা প্রতিবেশী ছিলাম, দুই বাড়ির মাঝে ছোট একটা দেয়াল, একটা ছোট গেট। সেই গেট দিয়ে আমাদের অবাধ যাতায়াত ছিল। তাদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন থেকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সবার অবাধ যাতায়াত ছিল, আর এসব সামলাতেন বঙ্গমাতা। আমরা তাকে কখনো কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি, দেখিনি তাকে উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে।

নিজের বিয়ের সময় হলুদের অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার উপস্থিতি ও আনন্দময় পরিবেশ তৈরি নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন ড. নাসরীন আহমেদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বঙ্গমাতার জীবন যেন বেগম রোকেয়ার তিনটি বইয়ের সাথে মিলে যায়। তাকে একজন রাজনীতিক, একজন বিশ্লেষক ও একজন পরামর্শক হিসেবেও উল্লেখ করেন এই অধ্যাপক। বঙ্গবন্ধুর অনেক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকে পেছন থেকে প্রেরণাও দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। বেগম মুজিবকে নিয়ে আরও গবেষণা করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে।

আলোচকরা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাবস্থায় বেগম মুজিবের দলকে সুসংগঠিত করাসহ বঙ্গমাতার অনেক অজানা গুণ সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

এইউএ/এইচএ/জেআইএম