আসিয়ান সম্মেলন ঘিরে কুয়ালালামপুরে গৃহহীনদের ধরপাকড়
আগামী সপ্তাহে আসিয়ান সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শতশত গৃহহীন মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সমালোচকদের দাবি, এই অভিযানটি মূলত আন্তর্জাতিক অতিথিদের সামনে দেশের ‘ইমেজ’ সুন্দর দেখানোর প্রচেষ্টা, বাস্তব সামাজিক সমস্যার সমাধান নয়।
ফেডারেল টেরিটরিজ সমাজকল্যাণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ‘কেএল স্ট্রাইক ফোর্স অ্যাক্টিভিটি ওরাং পাপা দান কানাক-কানাক’ নামের এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৪৫ জন গৃহহীনকে সরানো হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৮০ জন বিদেশি নাগরিক।
অভিযানটি যৌথভাবে পরিচালনা করছে কুয়ালালামপুর সিটি হল ও সমাজকল্যাণ দফতরসহ বিভিন্ন সংস্থা। লক্ষ্য করা হয়েছে শহরের পরিচিত গৃহহীন এলাকা—বুকিত বিনতাং, মসজিদ জামেক ও জালান তুয়ানকু আবদুল রহমান, যেগুলো আসিয়ান সম্মেলনের স্থান কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ভোররাতে পরিচালিত সর্বশেষ অভিযানে ১০১ জন গৃহহীনকে (এর মধ্যে ২৭ জন বিদেশি) ‘উদ্ধার’ করে শহরের মেদান তুয়ানকু হোমলেস ট্রানজিট সেন্টারে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ফেডারেল টেরিটরিজ সমাজকল্যাণ দফতরের পরিচালক চে সামসুজুকি চে নোহ বলেন, এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো আরও পরিচ্ছন্ন ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক সমাজের চোখে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। খাদ্য, পোশাক ও মৌলিক চাহিদা তাদের থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না, তবে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও জাতীয় ভাবমূর্তি—এই বিষয়গুলো একসঙ্গে সমাধান করা প্রয়োজন।
রাজধানীর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বলছে, এ ধরনের অভিযান প্রায়ই দেখা যায় যখন কুয়ালালামপুরে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। তাদের অভিযোগ, এটি মূল সমস্যার সমাধান নয় বরং কেবল ‘দেখানো’ উদ্যোগ।
একটি স্থানীয় স্যুপ কিচেনের (ভ্রাম্যমাণ খাবার বিতরণকারী সংস্থা) এক প্রতিনিধি বলেন, প্রতিবার বড় কোনো অনুষ্ঠান এলে এ রকম অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ইভেন্ট শেষ হওয়ার পর ওই মানুষগুলো আবার রাস্তায় ফিরে যায়। সামাজিক পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না, ফলে এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আসিয়ান সম্মেলন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশ্বনেতারা অংশ নেবেন।

এই উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে ১৬ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যান চলাচল সীমিত থাকবে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
কুয়ালালামপুর সিটি হলের ২০১৬ সালের জরিপে দেখা যায়, তখন রাজধানীতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন গৃহহীন ছিলেন। তবে বেসরকারি সহায়তা সংস্থাগুলোর ধারণা, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে।
কেচারা স্যুপ কিচেন সংস্থার প্রতিনিধি জাস্টিন চিয়া বলেন, মানুষকে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় সরিয়ে নেওয়া সমস্যার সমাধান নয়। টেকসই সমাধান হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি—যেমন বাসস্থান, কল্যাণমূলক সহায়তা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সেবার সহজপ্রাপ্যতা।
এমআরএম/এমএস