শামুক ধরার উৎসবে মুখর মালয়েশিয়ার পান্তাই ক্লেবাং সৈকত
গত সপ্তাহ থেকে মালাক্কার জনপ্রিয় সৈকত পান্তাই ক্লেবাং এক উৎসবমুখর স্থানে পরিণত হয়েছে—শামুক ধরতে ভিড় করছেন শত শত মানুষ/ছবি সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক শহর মালাক্কার জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র পান্তাই ক্লেবাং সৈকত গত এক সপ্তাহে যেন এক উৎসবমুখর স্থানে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া খবরের পর শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করছেন—হাতে জাল, স্কুপ বা কেবল খালি হাতে কাদামাটির মধ্যে নেমে শামুক ধরছেন আনন্দ-উল্লাসে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শামুকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সৈকতের পরিবেশে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ‘শামুক উৎসব’। নিম্ন জোয়ারের সময় কাদা ও বালির নিচে শামুক খোঁজার এই অভিযান এখন রীতিমতো পারিবারিক আনন্দে পরিণত হয়েছে। অনেকেই জানান, এখান থেকে কেউ খালি হাতে ফিরছেন না।
বর্তমানে বাজারে শামুকের দাম কিলোগ্রামপ্রতি ১০ থেকে ১৮ রিঙ্গিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তা সংগ্রহের আগ্রহ আরও বেড়েছে। কাম্পুং সুংগাই পুতাত, বাতু বেরেন্দাম এলাকার ২৯ বছর বয়সী শিশু সেবিকা রোসজানা জোহারি বলেন, ভিডিওতে এত শামুক দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। দামও অনেক বেশি, তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। সব শামুকই টাটকা ও মোটা। এগুলো দিয়ে পুরো সপ্তাহজুড়ে সাম্বল কেরাং, রেনদাং কেরাংসহ নানা খাবার তৈরি করা যাবে।
তিনি জানান, গতকাল সকাল ৭টায় সৈকতে পৌঁছে একাই দুই কিলোগ্রামের বেশি শামুক সংগ্রহ করেছেন। আরেক দর্শনার্থী সালিমাহ তাইব (৪৪), তানজুং মিনিয়াক এলাকার বাসিন্দা বলেন, নিজের হাতে শামুক ধরার আনন্দ একেবারেই আলাদা। কাদা আর রোদে ভিজে গেলেও আমরা খুশি, কারণ ফলন ভালোই হয়েছে।
মারিয়াম ইয়াহিয়া (৫০), সুংগাই হিতাম, তানজুং ক্লিং থেকে এসেছেন। তিনি নিজের পোশাক ব্যবসা থেকে একদিন ছুটি নিয়ে এই শামুক শিকার অভিযানে যোগ দেন।
‘এমন পরিবেশ খুব কমই দেখা যায়। একবার খোঁজা শুরু করলে বুঝতেই পারো না কখন স্কুপ ভর্তি হয়ে গেল!’ — বলেন তিনি।
লাম সুই কি (৫৩) ও তার স্ত্রী গাও চুন ইয়ান (৫০), পোকোক মাঙ্গা থেকে এসেছেন। তারা মূলত সামাজিক মাধ্যমে দেখে উৎসবটি দেখতে গিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেরাও শামুক ধরার আনন্দে যোগ দেন।
রাজ্যের আবাসন, স্থানীয় সরকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সিনিয়র নির্বাহী কাউন্সিলর দাতুক রাইস ইয়াসিন বলেন, যদি এই শামুক দীর্ঘদিন থাকে, তবে রাজ্য সরকার এটিকে নতুন একটি পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে প্রচারের পরিকল্পনা নিতে পারে। পান্তাই ক্লেবাং আগে থেকেই সপ্তাহান্তে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। তাই এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন ধরনের ইকো-ট্যুরিজম উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’
এদিকে রাজ্য মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক সাউফি আফফানদি তালিব জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সৈকত থেকে সংগ্রহ করা শামুক খাওয়ার ফলে কোনো বিষক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘যদিও শামুকগুলো খাওয়ার উপযোগী বলেই ধারণা করা হচ্ছে, তবুও আমরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছি। জনগণকে পরামর্শ দিচ্ছি যেন কাঁচা বা আধা-সেদ্ধ না খেয়ে ভালোভাবে রান্না করে খান।’
তিনি আরও সতর্ক করেন, জোয়ারের সময়সীমা ও কাদার গভীরতা সম্পর্কে সতর্ক না হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। ‘মানুষকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, কারণ হঠাৎ জোয়ার আসলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে,’ বলেন তিনি।
এমআরএম/জিকেএস