ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

হজ ও জিয়ারত, স্মৃতিতে ভাস্বর দিনগুলো

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৪৬ পিএম, ০৩ জুন ২০২৫

মুফতি নাঈম আবু বকর

আমার প্রথম হজে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল ২০১০ সালে। হজের জন্য আগে থেকেই মনটা অধীর ছিল। বয়সে যদিও তরুণ ছিলাম, ওই বয়সে হজে যাওয়ার আকাঙ্খা অনেকের কাছে বেমানান মনে হতে পারে, কিন্তু তখন হজের তীব্র বাসনা নিয়ে আমার দিনরাত পার হতো। পরম করুণাময় অকস্মাৎ আমার দোয়া কবুল করলেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কোনও রকম ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্ট হল। আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি শুধু দিন গুনি, কবে আসবে সেই শুভক্ষণ। কিন্তু এর মধ্যে বারবার দেখা দেয় বিপত্তি। বারবার আমার যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমিও বারবার আল্লাহর কাছে হাত পাতি। এক রকম গোঁ ধরেই তাঁর কাছ থেকে আদায় করে নিতে চাই আমার পরম বাসনা। বড়ই মেহেরবান তিনি। দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে আসল। আমাদের পাসপোর্ট ভিসার জন্য জমা পড়ল।

কিন্তু হায় আল্লাহ, আমাদের সহযাত্রী সবার ভিসা হলো, কিন্তু আমার আর আরও দুয়েকজনের ভিসা হলো না। কেন! বয়স কম, তাই থানা ক্লিয়ারেন্স দেয়নি। ছুটোছুটি শুরু করলাম। হাজীক্যাম্পে কর্তাব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিলাম। সেদিন কোনো আশার আলো পাইনি। হাজীক্যাম্পের ভেতর মসজিদ আছে। সেখানে গিয়ে দেখি অনেক হজযাত্রী এহরাম বেঁধে প্রস্তুত হচ্ছেন। মনটা একদম মুষড়ে পড়ল। নিজকে মনে হতে লাগল অসহায় এক হতভাগা। আল্লাহর কাছে হাত পাতা ছাড়িনি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অবশেষে সব বিপত্তির অবসান হল। ইহরামের পোশাক পরে একদিন উঠতে পারলাম হেজাজের বিমানে। সিটে বসে কেমন অনুভূতি হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না। বিমান আকাশে উড়ল। কখনো শুকনো কখনো অশ্রুভেজা চোখে আমি দেখতে লাগলাম রাতের আকাশ, রাতের পৃথিবী।

জেদ্দা নেমে বাসে রওয়ানা হলাম মক্কায় আমাদের নির্দিষ্ট হোটেলে। তারপর গোসল সেরে মসজিদুল হারামের পথে রওয়ানা হলাম। চোখে পড়ল মসজিদুল হারামের অবয়ব। আহা! আমার স্বপ্ন তাহলে সত্যি হচ্ছে। মেহেরবান আল্লাহ আসলেই আমার ডাক শুনেছেন। পুরো সময়টাই আচ্ছন্নের মত হয়ে ছিলাম। এক সময় প্রবেশ করলাম মসজিদুল হারামে। তার একটু পরই চোখে পড়ল আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা। ওমরাহ করলাম। মসজিদুল হারামে প্রথম নামাজ পড়লাম। কী সে আজানের সুর আর কী সে নামাজের স্বাদ, তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব।

বিজ্ঞাপন

হজ ও জিয়ারত, স্মৃতিতে ভাস্বর দিনগুলো

কিছুদিন মক্কায় থেকে আমরা রওয়ানা হলাম মদিনা মুনাওয়ারায়। বাসে বসে দরূদ পড়তে পড়তে চোখ ভিজিয়েছি। যে পেয়ারা নবি আমাদের সারা জীবনের প্রেরণা, যার কথা ও কর্ম নিয়ে সারা দিন আমাদের ভাবনা, তাঁর এত নিকটে আজ যাচ্ছি আমি!

পাক রওজায় আমার সালাম নিবেদন করলাম। মদিনা খুবই স্নিগ্ধ শহর। বাতাসে কেমন যেন মিষ্টি সুবাস। নয় দিন মদিনা মুনাওয়ারায় কাটিয়ে হজের উদ্দেশে ইহরাম বেঁধে মক্কার দিকে রওয়ানা হলাম। হজের কাজ শুরু হলো। মিনায় রাত যাপন করে আরাফায়। বিকেলে আরাফায় এক নির্জন জায়গা খুঁজে খুব দোয়া করেছি। অশ্রুর জোয়ার দেখে বিশ্বাস হলো, আল্লাহ অবশ্যই আমাকে মাফ করে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

হজের পর মক্কায় প্রায় বিশ দিন ছিলাম। বিভিন্ন ঐতিহাসিক জায়গা ঘুরে দেখলাম। গারে হেরায় গিয়েছিলাম রাতের বেলা। ভিড় ছিল না। গুহায় দুই রাকাত নামাজ পড়লাম। নামাজে সে আয়াতগুলো পড়লাম যেগুলো নাজিল হয়েছিল সেখানে। কতই না মনোহর সে স্মৃতি! একদিন গেলাম সাওর গুহায়। নবীজির স্মৃতি বিজড়িত তায়েফেও গেলাম একদিন। অপূর্ব সুন্দর শহর!

মসজিদুল হারামের নামাজ, কাবার দেয়াল জড়িয়ে রোনাজারি ইত্যাদি কোনো কিছুর স্বাদই ভুলবার মতো নয়। হিজাজের পবিত্র অনুভূতি এখনও আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়।

লেখক: আলেম, গবেষক ও লেখক

বিজ্ঞাপন

ওএফএফ/এমএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন