ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঈদ মৌসুমেও কেরানীগঞ্জের শ্রমিকদের অলস সময় পার

প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ১২ জুন ২০১৭

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতরের বাকি মাত্র সপ্তাহদুয়েক। এ উৎসবে দেশের আপামর মানুষের বড় অনুষজ্ঞ নতুন পোশাক। সে হিসেবে এখন নতুন পোশাক কেনাকাটার ধুম পড়ে যাওয়ার কথা।

কিন্তু দেশের পোশাকের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মার্কেট কেরানীগঞ্জের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। মন্দা দেখা দিয়েছে এখানকার ব্যবসায়। আসন্ন ঈদের ভরা মৌসুমেও ক্রেতা সংকটে পড়েছেন এখানকার প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী।

আর ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে যাওয়ায় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের বেতনভুক্ত কর্মচারীদের। কাজের বিনিময়ে মজুরি পাওয়া শ্রমিকদেরও চুপচাপ বসে থাকতে দেখা গেছে।

গতকাল রোববার কেরানীগঞ্জ ঘুরে এবং ব্যবসায়ী ও শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

কেরানীগঞ্জের পোশাক ব্যবসার সঙ্গে দুই প্রকারের শ্রমিক জড়িত। মাসিক বেতনভুক্ত এবং কাজের বিনিময়ে মজুরি পাওয়া শ্রমিক।

কাজের বিনিময়ে মজুরি পাওয়া শ্রমিকরা কেরানীগঞ্জের মার্কেট থেকে পণ্য কেনা ক্রেতাদের মালামাল বহন করেন। এখানে এ ধরনে শ্রমিক রয়েছেন প্রায় এক হাজার। পোশাক বিক্রির ভরা মৌসুমে এসব শ্রমিকের কদর বেড়ে যায়। কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ফোন করে তাদের গ্রাম থেকে ঢাকায় ডেকে আনেন।

কাজের ক্ষেত্রে এসব শ্রমিকের রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। তারা ইচ্ছামাফিক কাজ করেন। যেকোনো দোকান থেকেই তারা পণ্য বহন করতে পারেন। অবশ্য এজন্য কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি থেকে পরিচয়পত্র নিতে হয় এবং হলুদ রঙয়ের নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়। হলুদ রঙয়ের পোশাকও তাদের একটি পরিচয়পত্র।

এমনই এক শ্রমিক মাদারীপুরের মো. মামুন। তিনি বলেন, আমি প্রায় পাঁচ বছর ধরে কেরানীগঞ্জে কাজ করছি। মূলত দুই ঈদ ও শীতের সময় কেরানীগঞ্জে পোশাক বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। এ সময় মালিকরা ফোন করে আমাদের ডেকে আনেন। ভরা মৌসুমের এক মাস টানা কাজ করতে পারলে ৩০ হাজার টাকার ওপরে আয় হয়। কোনো কোনোদিন দেড় হাজার টাকারও বেশি আয় হয়।

মামুন বলেন, রোজা শুরুর ২০ দিন আগেই এবার গ্রাম থেকে চলে আসি। কিন্তু এখনও পাঁচ হাজার টাকা জোগাড় করতে পারিনি।

জোগাড় করবেনই বা কীভাবে? এখানকার ব্যবসায়ীদের বিক্রিতে ভাটা চলছে। বিক্রি না থাকলে তারা কার মাল টানবেন?

labour

তিনি বলেন, কয়েকজন মিলে তারা কেরানীগঞ্জের একটি বাড়িতে বসবাস করছেন। বাসা ভাড়া দিতে হয় জনপ্রতি ৭০০ টাকা করে। আর খাবার খান হোটেলে। হোটেলের সঙ্গে মাসিক চুক্তি দেড় হাজার টাকা। বাসা ভাড়া, খাওয়া ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়েই গ্রামের সংসার চালাই।

মো. আকাশ নামে এক শ্রমিক জানান, তিনি প্রায় সাত বছর ধরে কেরানীগঞ্জে আছেন। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী বরিশালের গ্রামের বাড়িতে থাকেন। শীতের সময় এবং দুই ঈদের আগে গ্রাম থেকে কেরানীগঞ্জে আসেন আকাশ। প্রতিটি সিজনেই দুই মাসের মতো কাজ হয়। তবে রোজার ঈদে কাজ একটু বেশি থাকে। মূলত শবে বরাতের পরপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা কেরানীগঞ্জে মাল কিনতে আসেন।

তিনি জানান, মালিক ফোন দেয়ার কারণে এবার শবে বরাতের ১০ দিন আগে ঢাকায় এসেছেন। মাঝে একবার বাড়িতে গিয়েছেন। মালিক আবার ফোন দিয়ে ডেকে এনেছেন। রোজার সপ্তাহখানেক আগে মোটামুটি ভালোই কাজ পেয়েছেন। কোনো কোনোদিন এক হাজার টাকাও আয় হয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে কাজ তেমন পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ সময় অন্যদের সঙ্গে গল্প করে অলস সময় কাটছে তার।

আকাশ আরও জানান, অনেকদিন হয়ে গেছে কেরানীগঞ্জে কাজ করছেন। এবার ভেবেছেন কিছু বাড়তি আয় করতে পারলে গ্রামে গিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করবেন। কিন্তু অবস্থা যা, সেই আশা পূরণ হবে না। যে আয় হচ্ছে তা নিজের থাকা-খাওয়াতেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে খুব একটা টাকা পাঠাতে পারছেন না।

নোয়াখালী থেকে আসা শ্রমিক মো. জুয়েল জানান, দুই বছর ধরে কেরানীগঞ্জে কাজ করছেন তিনি। গত বছরের রোজার ঈদে ভালোই আয় হয়েছিল। দেড় মাসের মতো কাজ করে গ্রামের বাড়িতে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার পাঁচ হাজার টাকাও নিতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে।

তিনি জানান, এখন কাজ করতে পারেন বলে মালিকরা ফোন দিয়ে ডেকে আনেন। কিন্তু যখন কাজ করার শক্তি থাকবে না তখন কেউ আর ডাকবে না। আশা আছে কিছু টাকা জোগাড় করতে পারলে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করবেন। ব্যবসা দাঁড় করাতে পারলে বিয়ে করার ইচ্ছা আছে।

বরিশালের আরেক শ্রমিক মো. আফজাল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেরানীগঞ্জে কাজের ক্ষেত্রে কোনো সরদার আছে কিনা? তিনি জানান, এখানে কোনো সরদার নেই। কাউকে কোনো টাকাও দিতে হয় না। সবাই যার যার মতো কাজ করেন। দোকান মালিকরাই কাজের জন্য শ্রমিকদের গ্রাম থেকে ঢাকায় ডেকে আনেন।

তবে ঈদের আগে মালিকদের সমিতি থেকে তাদের কিছু টাকা ঈদ বোনাস হিসেবে দেয়া হয়।

এমএএস/এসআই/এসআর/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন