স্বপ্নেও ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি অটোরিকশার মালিক হমু
কেমন আছেন আপনি? নিজে অটোরিকশার মালিক হতে পেরে কেমন লাগছে? মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ছোট এ দুটি প্রশ্ন করতেই ওপার থেকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে হেসে উঠলেন সত্তরোর্ধ্ব রিকশাচালক হানিফা।
এক নিশ্বাসে বলতে থাকলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি অটোরিকশার মালিক হমু। আল্লাহ পাক চাইলে যখন-তখন স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন, আমিই তার বড় প্রমাণ। তা না অইলে আপনি সেদিন কেন আমার সঙ্গে যাইচা কথা কইলেন, নিজে থাইক্যাই আমার জন্য কিছু করার চেষ্টা করবেন জানিয়ে চলে গেলেন। এরপর পুরাটাই স্বপ্নের মতো। আপনের উছিলায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।’
জয় মানবতার জয়। সপ্তাহখানেক আগে বৃদ্ধ রিকশাচালক হানিফা শাহবাগ থানার অদূরে দাঁড়িয়ে জানিয়েছিলেন, সারাদিন রিকশা চালালেও রোজা ভাঙেন না। তিনি জানিয়েছিলেন অনেক বছরে হাজার পঁচিশেক টাকা জমিয়েছেন। হাজার পঞ্চাশেক টাকা হলে মৃত্যুর আগে নিজে একটা অটোরিকশার মালিক হতে চান।

হানিফা নামের ওই বৃদ্ধের ডাক কবুল করেছেন মহান আল্লাহ তাআলা। আজ (বুধবার) তিনি অটোরিকশার মালিক হয়েছেন। এ জন্য তাকে নিজের গাঁটের একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। নিঃস্বার্থভাবে এ বৃদ্ধের জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন কয়েকজন মানবসেবক।
জাগো নিউজে প্রকাশিত রিকশা চালালেও রোজা ভাঙেননি সত্তরোর্ধ্ব হানিফা প্রতিবেদনটি পড়ে হাতেগোনা যে কয়েকজন এগিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সিরাজগঞ্জের মামুন নামে এক যুবক। তিনি একাই ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেন।
আজ সকালে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মামুন জানান, তারা অসহায় দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকেন। অসহায় কোনো মানুষকে নিয়ে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশ, প্রচারিত হলে তিনি সেই প্রতিবেদনটি ফেসবুকে পোস্ট করে তার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা দেশ-বিদেশের বন্ধুদের জানান। অনেকেই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।

মধুমতি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমরান আলম। জাগো নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ে এই বৃদ্ধকে অফিসে ডেকে নিয়ে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেন। এছাড়াও আরও দুই-তিনজন পৃথকভাবে মোট প্রায় ৯ হাজার টাকা দেন।
বৃদ্ধ হানিফা হাজারীবাগ বেড়িবাঁধের পশ্চিমপাশে ঝাউচর এলাকায় থাকেন। তিনি বহুবছর যাবৎ জনৈক আনোয়ার হোসেনের গ্যারেজের রিকশা চালান। মঙ্গলবার রাতে গ্যারেজ মালিকের ছেলে শুভ জানান, তিনি ছোটবেলা থেকে হানিফা নামের ওই বৃদ্ধকে রিকশা চালাতে দেখে আসছেন। তিনি তাকে নানা বলে ডাকেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শুভ বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলছিলেন, এতদিনে বুঝি বৃদ্ধের কষ্টের অবসান হতে চলেছে।
বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে হানিফা জানান, মাত্র আধ ঘণ্টা আগেই রিকশা নিয়ে গ্যারেজে পৌঁছেছেন। যে দোকান থেকে অটোরিকশা কেনা হয়েছে সেখানকার চালক সেটি চালিয়ে এনেছেন। ওই চালক দু-একবার নতুন অটোরিকশা গর্তে ফেলায় মনে কষ্ট পেয়েছেন হানিফা।
হানিফা জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে কাল থেকেই নিজের অটোরিকশা নিয়ে বের হবেন।
এমইউ/জেডএ/বিএ