ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

আওয়ামী লীগ ভারতের কথায় চলে না

ফজলুল হক শাওন , সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮

লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, এমপি। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাবেক মন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সরকারের অবস্থান নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। দীর্ঘ আলোচনায় গুরুত্ব পায় রাজনীতি, নির্বাচন প্রসঙ্গেও। মতামত ব্যক্ত করেন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে।

আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।
বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ফজলুল হক শাওন ও সায়েম সাবু। সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

জাগো নিউজ : আগের পর্বে নির্বাচন, ভোট প্রসঙ্গে বলছিলেন। দেশের বিরাজমান গণতন্ত্র নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ফারুক খান : গণতন্ত্রের উন্নয়নের শেষ নেই। আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক ধারা আরও প্রসারিত করা দরকার।
তবে গণতন্ত্রের ঘাটতি থাকলে সেটা বিএনপি-জামায়াতের কারণেই। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা চালালেই গণতন্ত্রের রাস্তা বন্ধ হয়। সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তারাও জিতেছে। নির্বাচনকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেই গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জাগো নিউজ : তাহলে এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়?

বিজ্ঞাপন

ফারুক খান : বিএনপি এবং জামায়াত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলেই দেশে শান্তি ফিরবে। তাদের নিজেদের মধ্যে আগে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিতে হবে। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা জাতীয় নির্বাচনে তৃণমূল কর্মীদের মতামত নেই।

শুনছি, ৩০০ আসনের জন্য ৯০০ জনের নাম বিএনপি তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়েছে। তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির এখন কী জানেন? তিনি লন্ডনে বসে ৯৩ দিনের হরতাল-অবরোধ পরিচালনা করেছেন। কী লাভ হয়েছে? বিএনপির নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। তারা দেশের মানুষের কাছে ভুল স্বীকার না করে ভারতের কাছে গিয়ে অতীতের ভুল স্বীকার করে। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ড, জঙ্গিবাদ বিস্তারের জন্য ভুল স্বীকার করছে।

জাগো নিউজ : ভারতমুখী কিন্তু আওয়ামী লীগও। তার মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বাড়ছেই।

বিজ্ঞাপন

ফারুক খান : মোটেও না। প্রতিবেশীকে বদলাতে পারবেন না। এখন পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বাংলাদেশই লাভবান হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, সিটমহল, সমুদ্রসীমা, গঙ্গাচুক্তিসহ সব বিষয়ে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে।

জাগো নিউজ : তিস্তা ইস্যু, সীমান্তে গুলি, ট্রানজিট, বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়গুলো অস্বীকার করার উপায় নেই?

ফারুক খান : অনেক চুক্তি পঞ্চাশ বছরেও হয়। তিস্তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মাথায় রাখতে হবে পানি ভারতেরও দরকার। আলোচনা হবে দুই দেশের স্বার্থ নিয়েই। আমরা প্রকৌশল সমাধান খুঁজছি। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

বিজ্ঞাপন

ট্রানজিট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। যখন আমি বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম। তখন আমি বলেছি, ফি ছাড়া কোনো ট্রানজিট হবে না। হয়নি। আমি মনে করি নেপাল, ভুটানের সঙ্গেও ট্রানজিট হওয়া জরুরি। ফলে বাংলাদেশই লাভবান হবে।

জাগো নিউজ : ট্রানজিট নিয়ে আসলে জটিলতা কোথায়?

ফারুক খান : আলোচনার ঘাটতি রয়েছে। তবে দ্রুতই এর সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। চাপ দিয়েও কোনো সমাধান হবে না। নেপালের সঙ্গে চুক্তি হলো বিদ্যুৎ সেক্টরে। ভারত রাজি হয়েছে। ভারতের মাটি ব্যবহার করতে হবে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে গিয়ে।

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ : ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে বলছিলেন?

ফারুক খান : ভারত থেকে এ বছর ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি করেছি। রফতানি করেছি ১ বিলিয়ন ডলার। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই ঘাটতি? প্রথমত ভারত অনেক বড় দেশ। আমরা উৎপাদন বাড়াতে পারিনি।

দ্বিতীয়ত, আমাদের দেখতে হবে ভারত থেকে আমরা আসলে কি আমদানি করছি। ভারত থেকে আমরা সাধারণত তুলা এবং সুতা আমদানি করে আসছি। ৪ বিলিয়ন ডলারের সুতা কিনে আমরা ৩০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানি করছি। এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে পোশাক খাতে।

বিজ্ঞাপন

তুলা বা সুতার বাইরে খাদ্য এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। এগুলো আমাদের অতিপ্রয়োজনীয়। ভারত থেকে না আনলে অন্য দেশ থেকে আনতে হতো। খরচ হয়তো আরও বেড়ে যেত। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি ভিন্ন ভিন্ন চোখে দেখতে হয়। আমেরিকার সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আমরা আমেরিকায় রফতানি করি বেশি। আমদানি করি কম। কই, আমেরিকা তো এভাবে বলে না। প্রয়োজনের তাগিদেই আমদানি, রফতানি।

বাণিজ্য ঘাটতি হয় যদি শুল্ক নির্ধারণ করে পণ্য প্রবেশ করতে না দেয়। ভারত তো তা করছে না। মদ, কোমল পানীয় এবং তামাকজাত পণ্যের বাইরে সব পণ্যই ভারতে শুল্ক ছাড়া রফতানি করা যাচ্ছে।

জাগো নিউজ : দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি বদলে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত বলয় থেকে অন্যরা বেরিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির প্রশ্নে বাংলাদেশে ভারত আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। কেন?

ফারুক খান : ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার। আমরা কারও সঙ্গে শত্রুতা করতে চাই না। অন্যরা কি করল, তা দেখার বিষয় না। ভারত আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে কীনা, তা দেখার বিষয়।

জাগো নিউজ : গত নির্বাচনে ভারত তো প্রভাব রাখলই বটে?

ফারুক খান : ধারণা থেকে মূল্যায়ন করলে হবে না। প্রমাণ কী? বিএনপি-জামায়াত সব কিছুতেই ভারতের গন্ধ পায়। আর এ কারণেই বিএনপি আবার ভারতের কাছে গিয়ে ক্ষমা চায়। আওয়ামী লীগ ভারতের কথায় চলে না। আমাদের ক্ষমাও চাইতে হয় না।

জাগো নিউজ : সামনের নির্বাচন নিয়ে কী বলবেন?

ফারুক খান : সামনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে বিশ্বাস করি। দেশের সব জনগণ এবং দল এখন নির্বাচনমুখী। সবাই মাঠে নেমে কাজ করছেন। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচন কমিশনও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। সবাই সংবিধানের পক্ষে। বিএনপি জোট কিছুটা অস্পষ্ট রেখেছে। তবে সেটাও ওপরের কথা। তারা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাগো নিউজ : বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে, এমনটি মনে করছেন?

ফারুক খান : বিএনপির আর উপায় নেই। তারা নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে। নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ হয় না, তা বুঝে গেছে।

জাগো নিউজ : বিএনপি যদি না আসে, তাহলে কি ৫ জানুয়ারির ফর্মেটেই (আদলে) নির্বাচন?

ফারুক খান : ৫ জানুয়ারির ফর্মেট বলতে কিছু নেই। বিএনপি না আসলে তাদের ব্যাপার। নির্বাচন হবে সংবিধানের ফর্মেটেই। বিএনপি এখন ভুল বুঝতে পারছে। জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাব নেই।

জাগো নিউজ : গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপি জোট ভাঙতে সরকার কাজ করছে। বিশেষ করে বিএনপি থেকে জামায়াতকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কী বলবেন, এ ব্যাপারে?

ফারুক খান : আমি মনে করি, অনেক আগেই জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া উচিত ছিল বিএনপির। বিএনপির মধ্যকার অনেকেই জামায়াতের বিপক্ষে। ফলে বিএনপির-ই লাভ হবে।

জাগো নিউজ : জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গোপন আঁতাতের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

ফারুক খান : প্রশ্নই আসে না। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে আমাদের রাজনীতি করা সুবিধা। কিন্তু দেশের বৃহৎ স্বার্থে মনে করি, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া উচিত বিএনপিকে। ফলে বিএনপিও অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। জামায়াত থাকলে বিএনপিও চাপে থাকে।

এএসএস/এমআরএম/জেআইএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন