ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

মুশফিকের মতো ব্যক্তিত্বকে ক্রিকেট ব্যবস্থাপনায় চান পাইলট

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন, শুধু মেধা-টেকনিক আর স্কিল ভালো থাকলেই কেউ ১০০ টেস্ট খেলতে পারে না। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে লম্বা করতে হলে সবার আগে দরকার সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। জাতীয় দলের এ সাবেক ক্যাপ্টেন ও কিপারের অনুভব, বেহিসেবি জীবন, রুটিন ও নিয়ম মেনে না চলা জীবন নিয়ে কোনোভাবেই ক্যারিয়ার লম্বা করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি বিসিবির বর্তমান পরিচালক পাইলট মনে করেন, অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই টিকে থাকার দৃঢ় সংকল্প।

নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের এক ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে মেলে ধরে পাইলট বলেন, ‘আমার খেলোয়াড়ি জীবনের একটা ঘটনা বলি, হয়তো এই প্রজন্ম তাকে তেমনভাবে চেনে না। জানে না; কিন্তু আপনাদের মতো সিনিয়র জার্নালিস্টরা যারা পুরোনো দিনের খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন আমার আব্বা (প্রয়াত জাতীয় ফুটবলার শামসু) ঢাকার ক্লাব ফুটবলে সুনামের সাথে ২০ বছর খেলেছেন। যার ১০ বছর মোহামেডানে। ৫ বছর আবাহনীতে। আর বাকি ৫ বছর আজাদ স্পোর্টিংসহ অন্য ক্লাবে।’

‘আমার খেলোয়াড়ি জীবনে টার্গেটই ছিল আব্বার চেয়ে বেশি সময় ধরে ঢাকা লিগে ক্রিকেট খেলা। আমার যখন ১৪-১৫ বছর হয়ে গেলো, তখন মনে হলো আমাকে যে করেই হোক আব্বার সেই ২০ বছরের রেকর্ড ভাঙতে হবে। পরে আমি ১৯৮৯ থেকে ২৩ বছর খেলেছি। আমার মনে হয় মুশফিককে ১০০ টেস্ট খেলতে দেখে এখন যাদের ৫০-৬০টা টেস্ট আছে, তাদের অনেকেই চাইবেন ১০০ বা তার বেশি টেস্ট খেলতে। শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিম ও পারভেজ ইমনরা হয়তো সে পথেই হাঁটবে।’

তখন ওই জায়গায় তো আর এমনি এমনি পৌঁছানো সম্ভব নয়। সেখানে যেতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। অনেক পরিশ্রম, অধ্যবসায় করতে হবে এবং অনেক কিছু ত্যাগও করতে হবে। মোটকথা, তাদেরও মুশফিকের মতো সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে হবে। একটা রুটিন মেনে খাবারদাবার, চলাফেরা, সব কিছুতেই একটা সিস্টেম মেনে চলতে হবে। মুশফিক হতে পারে আদর্শ। তাকে ফলো করলেই তা সম্ভব হবে।

সোজাসাপ্টা কথা বলায় অভ্যস্ত পাইলট আরও উল্লেখ করেন যে, ডিসিপ্লিন লাইফ লিড না করলে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব হয় না। সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার বাসিত আলীর প্রসঙ্গ টেনে পাইলট বলেন, ‘আমি একজন পাকিস্তানি ক্রিকেটারের উদাহরণ দিতে চাই। আমি তার নাম নাইবা বললাম, শুধু এইটুকু বলি যে, তিনি ছিলেন হাইলি ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার (বাসিত আলী)। তার ক্রিকেট জীবন শুরুও হয়েছিল উল্কার বেগে; কিন্তু বেহিসেবি জীবন যাপন আর শৃঙ্খলা না মানায় অকালে শেষ হয়ে যায় তার ক্যারিয়ার। না হয় তিনিও অনেক বড় তারকা, গ্রেট ক্রিকেটার হতে পারতেন। মেধা, টেকনিক আর স্কিল ছিল অসামান্য; কিন্তু তারপরও পারেননি বড় ক্রিকেটার হতে।’

দেখেন শাহরুখ খানকে আমরা সবাই পর্দায় দেখি। কি দারুণ অভিনেতা! অভিনয় দেখে আমরা মুগ্ধ হই। বলি শাহরুখ খান কি সুন্দর অভিনয় করেন। তার অভিনয় দক্ষতা কত! তিনি কত বড় অভিনেতা। কিন্তু তিনি কি করে ৩০ বছর পর্দায় টিকে আছেন, রাজত্ব করছেন মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে, তার পেছনেও যে শুধুই অভিনয় দক্ষতা আর ট্যালেন্টই শেষ কথা নয়। সেটা কজন ভাবেন?

সেখানেও যে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে একটা সুশৃঙ্খল ও রুটিন বাঁধা জীবন যাপন করতে হয়েছে, হচ্ছে এবং অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়েছে- তা আমরা ক’জন খেয়াল করি।

এই উদাহরণটা দিয়ে আমি বোঝাতে চাইলাম যে মেধা, টেকনিক আর স্কিলই শেষ কথা নয়। চেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপনই ক্যারিয়ার বড় করার সোপান। মুশফিক সেটাই করেছে। তাই সে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। সে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আইকন। যে নিজের জীবন উৎস্বর্গ করেছে ক্রিকেটের জন্য। আমি চাই মুশফিক তার ১০০ নম্বর টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখুক। যাতে তার শততম টেস্টটা একটা দারুণ সুন্দর ও দীর্ঘ ইনিংস দিয়ে সাজানো থাকে।

আরেকটা বিষয় চাইবো মুশফিকের কাছ থেকে। তাহলো, সে যেন ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে থাকে। এমন নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ আর মেধাবী ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব কোনো না কোনো না পরিচয়ে ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে থাকলে দেশের ক্রিকেটেরই মঙ্গল।

আমাদের দেশের ক্রিকেটে হাই কোয়ালিটি ক্রিকেটার ও খুব ভালো ট্যালেন্ট কম। মুশফিক হচ্ছে সেই মানের ও মাপের বড় এবং মেধাবী ক্রিকেটার। তার মতো মেধাবী, পরিশ্রমি, অধ্যবসায়ী, অনুশীলনে শতভাগ মনোযোগী, মনোসংযোগী আর শতভাগ আত্মনিবেদনকারী ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব খুব কম।

এমন নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব দেশের ক্রিকেট বোর্ড বা ক্রিকেট ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত থাকলে দেশের ক্রিকেটেরই উপকার হবে। তাই আমি চাই মুশফিক যখন, যেদিনই মাঠের ক্রিকেট বিদায় জানাবে, তারপর যেন ক্রিকেটের সাথেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। তাতে দেশের ক্রিকেট উপকৃত হবে।

এআরবি/আইএইচএস