ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

অ্যাশেজে ব্যর্থতা, ইংল্যান্ডে জোরালো হচ্ছে পরিবর্তনের দাবি

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:২২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

পার্থের পর ব্রিসবেন, এরপর অ্যাডিলেড- সব জায়গাতেই ইংল্যান্ডের কপালের লিখন হলো পরাজয়। ৫ ম্যাচের অ্যাশেজে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ পরাজয় বরণ করলো ইংল্যান্ড। ইতিহাসের সবচেয়ে অপচয়ী অ্যাশেজ সফরগুলোর একটিতে পরিণত হলো ইংল্যান্ডের এই অস্ট্রেলিয়া অভিযান। যার ফলে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে এখন পরিবর্তনে দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।

বাজবল ক্রিকেট যে মাত্র কিছুদিনের একটি মিথ, তা এবার অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেই প্রমাণ হয়ে গেলো। মাত্র ১১ দিনের ক্রিকেটেই অ্যাশেজ হাতছাড়া হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। পার্থের অপটাস স্টেডিয়ামে সারি বেধে জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে শুরু করে অ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি অ্যাশেজ ধরে রাখার উদ্‌যাপন— এক মাসের ব্যবধানে ইংল্যান্ডের যাত্রা পূর্ণ হলো হতাশা আর শূন্যতায়। ফলাফল যাই হোক, এই সফর ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেবে সবচেয়ে অপচয়ী অ্যাশেজ সফরগুলোর একটি হিসেবে।

অ্যাডিলেডে ৮২ রানের ব্যবধানে হার ছিল সিরিজের ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স এবং ছোট ব্যবধানে হারের লড়াই— ২০১১ সালের পর অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ডের ১৬টি টেস্টের মধ্যে এটিই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। শেষ দু’দিনে কিছুটা লড়াইও দেখিয়েছে তারা— অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ছয় উইকেট তুলেছে ৩৮ রানে, এরপর ৪৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় কিছু মুহূর্তে স্বপ্নও দেখিয়েছে ইংল্যান্ডকে; কিন্তু এসব এসেছে খুব বিলম্বে। অস্ট্রেলিয়ার জয় ততক্ষণে নিশ্চিত।

এই সিরিজে বারবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানে এগিয়ে থেকেও এক উইকেট হারানোর পর ধসে পড়ে ৯ উইকেটে ৯৯ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম দিনে ৩ উইকেটে ১৭৬ থেকে ৭৫ রানে মিডল অর্ডারের চার উইকেট হারায় ইংলিশরা। হ্যারি ব্রুকের প্রথম বলেই ছক্কা মারার চেষ্টাটাই ছিল এই ধসের সূচনা।

জো রুটের শতকে ৩৩৪ রান করেও বাজে বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৫১১ রান করতে দেয় ইংল্যান্ড। ড্রপ ক্যাচ, স্নিকো ভুল— উসমান খাজা ৫ রানে জীবন পেয়ে ৮২, অ্যালেক্স ক্যারে ৭২ থেকে ১০৬— সব মিলিয়ে নিজেদেরই হারিয়েছে ইংল্যান্ড।

অ্যাশেজের জন্য ইংল্যান্ডের প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। টেস্ট ভেন্যুতে প্রস্তুতির পরিবর্তে ক্লাব গ্রাউন্ডে তিনদিনের ম্যাচ— এমন সিদ্ধান্তকে অনেকেই ভুল বলছেন। তবে এই সফরে ব্যর্ধতার শেকড় আরও গভীরে— ২০২৪ সাল থেকেই।

ENGLAND

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম–বেন স্টোকস যুগে ২১ টেস্টে ফল ১১ জয়, ৯ হার। পরিবর্তনের যুক্তি ছিল— জেমস অ্যান্ডারসনের বিদায়, স্টুয়ার্ট ব্রডের অবসর, নতুন কিপার (জেমি স্মিথ), নতুন স্পিনার (২০ বছর বয়সী শোয়েব বশির)। যুক্তি ছিল, কিন্তু বাস্তবতায় সংহতির অভাব স্পষ্ট হয়েই দেখা দিয়েছে ইংল্যান্ড দলে।

বাজবল: শুধুই মিথ!

বাজবল একসময় ছিল ইংল্যান্ডের মুক্তির প্রতীক। কিন্তু বড় মঞ্চে পরিণতি ছাড়াই স্বাধীনতা কাজ করে না— এটাই আবার প্রমাণ হলো। চাপের মুখে বেশিরভাগ ইংল্যান্ড ক্রিকেটার সঙ্কুচিত হয়েছেন।

মাঠের বাইরে অতিরিক্ত স্বচ্ছন্দতা, ক্যাসিনো–বারে যাতায়াত, ভক্তদের সঙ্গে অতিরিক্ত মেলামেশা— সবই হয়তো আলাদা করে অপরাধ নয়; কিন্তু বড় সিরিজে এসবই মানসিক অপরিপক্বতার ইঙ্গিত দেয়। অ্যাডিলেডে ভালো পারফরম্যান্সও এসব আড়াল করতে পারেনি। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ ক্রিকেট এখন আর আগের মত কাজ করে না।

নেতৃত্ব, কোচিং ও কাঠামোগত সংকট

বোলিং আক্রমণে অভিজ্ঞতার অভাব প্রকট। জোফরা আরচারই সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার (১৮ টেস্ট)। বিভিন্ন সময়ে তিনজন বোলিং কোচ, স্থায়ী ফিল্ডিং বা উইকেটকিপিং কোচ নেই— এসবের ফল মাঠে পড়েছে ক্যাচ মিস আর ভুল সিদ্ধান্তে।

শীর্ষ সাত ব্যাটারও তাল হারিয়েছে। অলি পোপ ফর্মে নেই, হ্যারি ব্রুক সম্ভাবনা দেখিয়েও ধারাবাহিক নন, বেন ডাকেট নিজের প্রক্রিয়াতেই সন্দিহান। অস্ট্রেলিয়া ডাকেটকে গড়ে ১৬.১৬–এ আটকে দিয়েছে, যা বাজবলের প্রতীকী ব্যর্থতা।

স্টোকস দুর্দান্ত দলনেতা; কিন্তু তাকে ঘিরে অতিমাত্রায় মুগ্ধতা দলকে নিস্তেজ করে দিয়েছে। ‘বিস্টমোড’ গল্প, ৪১ ডিগ্রিতে অতিরিক্ত খাটুনি- সব মিলিয়ে নেতৃত্ব মানবিক সীমা ছাড়িয়েছে। শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি— এই দুটির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে দলের মধ্যে।

ইনজুরির কারণে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স প্রথম দুই টেস্ট খেলেননি, নাথান লায়ন ছিটকে গেছেন, হ্যাজেলউড এক টেস্টও খেলেননি, স্টিভেন স্মিথ তৃতীয় টেস্টে নেই— তবু অস্ট্রেলিয়া নির্দয়ভাবে এগিয়ে। এতে ইংল্যান্ডের ব্যর্থতা আরও স্পষ্ট।

ইংল্যান্ডের যে বাজবল প্রথম ১৮ মাসে মুগ্ধ করেছিল, তার দ্বিতীয় অধ্যায় অ্যাশেজে এনে দিয়েছে হতাশা। পরিচয়, আস্থা— দুটোই ক্ষয় হয়েছে। দায় সবার— ক্যাপ্টেন, কোচ, নির্বাচক, ব্যবস্থাপনা। যার ফলে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে। না হলে এই অ্যাশেজ সফর শুধু হার নয়, ইতিহাসের এক ব্যয়বহুল অপচয় হয়েই থেকে যাবে ইংল্যান্ডের জন্য।

আইএইচএস/