ফুটবল যাদুকর সামাদের মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার
উপমহাদেশের ফুটবল জগতের কিংবদন্তী ফুটবল যাদুকর সামাদের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অপূর্ব ক্রীড়া শৈলীর প্রদর্শন করে ফুটবল জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ক্রীড়াবিদ ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্ররুয়ারি দিনাজুপুরের পার্বতীপুরে মৃত্যুবরণ করেন।
ফুটবল যাদুকর সামাদকে বলা হয় কিংবদন্তী মহানায়ক। যাদুকর উপাধি যাদু বিদ্যা জানার জন্য নয়, ফুটবল খেলার অপূর্ব দক্ষতা এবং উন্নতমানের ক্রীড়া কৌশল প্রদর্শনের জন্যই তার এ যাদুকর উপাধি।
১৯১৫ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল এই ২৩ বছর ছিল সামাদের খেলোয়াড়ী জীবন। তিনি ছিলেন একজন রেল কর্মচারী। সে সময় ইবিআর নামে যে, রেলওয়ে ফুটবল টিম ছিল সামাদ তাতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সেই কারণে ইবিআর এ সামাদ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। সামাদের ২৩ বছর খেলোয়াড়ী জীবনে এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে যা খেলার জগতে উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। দেশে এবং দেশের বাইরেও তার অভিনব খেলা দেখে মানুষ হতবাক হয়েছে। তার যাদুকরী ক্রীড়া কৌশল দেখে দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়েছে। করতালী দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে।
একবার খেলার পূর্ব মহূর্তে মাঠের চারিদিকে পায়চারী করে এসে সামাদ ক্রীড়া কমিটির নিকট অভিযোগ করলেন এ মাঠ আন্তর্জাতিক মাপ হিসেবে ছোট আছে বিধায় এ মাঠে আমাদের টিম খেলতে পারে না। পরে মাঠ মাপার পর তার অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। আরেকবার মাঠের মধ্যস্থল থেকে বল নিয়ে সব খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে বল ড্রিবলিং করে নিক্ষেপ করলেন গোলে, বল গোলে প্রবেশ না করে গোল পোষ্টের কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে বাহিরে চলে গেলে রেফারী বাঁশী বাজিয়ে বলকে আউট ঘোষণা করলেন। কিন্ত, সামাদ তা গোল হয়েছে বলে চ্যালেঞ্জ করলেন। আমার শটে নিশ্চিত গোল হয়েছে। সামাদের শটের মেজারমেন্ট কোন দিন ভুল হয় নাই। গোল পোস্ট উচ্চতায় ছোট আছে। মেপে দেখা গেল সত্যিই তাই। তার খেলোয়াড়ী জীবনের এমন বহু ঘটনা আজও দেশ বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অগনিত সামাদ ভক্তের মুখে মুখে। যাদুকর সামাদ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে চলে আসেন ও বসবাস করতে শুরু করেন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে। রেলওয়ে জংশনের জন্য খ্যাত বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের বৃহৎ রেলওয়ে জংশন পার্বতীপুরে ফুটবল যাদুকর সামাদ ছিলেন।
যদিও রেলওয়ের কোনো প্লাটফরম ইন্সপেক্টর পদ নেই তবুও যাদুকর সামাদের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ এই পদ সৃষ্টি করেছিলেন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে পার্বতীপুর জংশনে প্লাটফরম ইন্সপেক্টর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি রেলওয়ে সাহেব পাড়া কলোনীতে টি ১৪৭ নম্বর বাসায় থাকতেন এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি এই বাসাতেই ছিলেন। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের ভুরী গ্রামে। এই গ্রামেই ১৮৯৫ সালের ৬ ডিসেম্বর এক নিভৃত পরিবারে তার জন্ম। ‘জাদুকর সামাদ’ নামে পরিচিত হলেও তাঁর পুরো নাম সৈয়দ আবদুস সামাদ। তিনি ১৯৬৪ সালে ২ ফেব্ররুয়ারি পার্বতীপুরে মৃত্যুবরণ করেন। পার্বতীপুর শহরের ইসলামপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এমএএস/আরআই