ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

পতাকা আর উচ্ছ্বাসে ক্যানবেরা হল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মশিউর রহমান তুহিন, সিডনি থেকে...

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা হয়ে উঠেছিল যেন আরেক বাংলাদেশ। মানুকা ওভালকে মনে  হচ্ছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। চারদিকে শুধু লাল আর সবুজ। প্রবাসী মানুষগুলোর দেশপ্রেম টাইগারদের জন্য সমর্থন হয়ে কাঁপিয়ে তুলছিল গ্যালারি।

দেশের রাজেনৈতিক অস্থিরতা আর প্রতিনিয়ত নানান খারাপ খবর শুনতে শুনতে  হতাশ হয়ে ওঠা মানুষগুলোর সামনে তখন আলোকবর্তিকার মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেশে আর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সমস্ত বাংলাদেশীকে এক সুতোয় বাঁধার এই খেলা তাই পরিণত হয়েছে এক মহোৎসবে।
ক্রিকেটাররাও হতাশ করেননি সমর্থকদের। জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা।


অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে হাজার হাজার প্রবাসি বাংলাদেশীর ঢল নেমেছিল ক্যানবেরায়। দল বেঁধে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অফিসিয়াল টি-শার্ট  পরে খেলা দেখার জন্য বের হয়েছিলেন সবাই। বিশেষ করে সিডনি থেকে এসেছিলেন সবচেয়ে বেশি প্রবাসি। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সবাই রওয়ানা হয়েছিলেন ক্যানবেরার দিকে। মাঝে মাঝে যাত্রা বিরতি দিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করছিলেন তারা।

খেলা দেখতে গিয়ে অনেককে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গাড়ি পার্ক করা নিয়ে। স্ট্রিট পার্ক করতে গিয়ে জরিমানা গুনতে হয়েছে অনেককেই। কিন্তু গ্যালারিতে বসে প্রিয় দলের খেলা দেখা আর দেশের জন্য চিৎকার করার আনন্দের কাছে এ যেন কিছুই নয়।

খেলা শুরুর দিকে বিজয়- তামিমের বল নষ্ট করার প্রবণতা দেখে দর্শকরা কিছুটা হতাশ হলেও মুশফিক- সাকিব জুটির ঝোড়ো ব্যাটিং সে কষ্ট ভুলিয়ে দেয় নিমেষেই। প্রতিটি চার- ছক্কার সাথে সাথে গ্যালারিতে ওঠে উল্লাসের বাঁধভাঙা ঢেউ । নেচে গেয়ে, চিৎকার করে টাইগারদের উৎসাহ দিতে থাকেন গ্যালারির সমর্থকরা।


খেলা নিয়ে আমাদের কথা হয় স্থানীয় কিছু প্রবাসী দর্শকের সাথে।
স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে খেলা দেখতে ভোরবেলা সিডনি থেকে  রওয়ানা হয়ে ক্যানবেরা এসেছিলেন সোহেল আহেমেদ। খেলা দেখে জয় নিয়ে ফিরতে পারায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি। পরের ম্যাচগুলোয় দল আরও ভালো খেলবে বলে তার বিশ্বাস।
তামজিদ রহমান আরিফ ডারউইন থেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন। গাড়ি পার্ক করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। কিন্তু দলের জয়ে তার কষ্ট সার্থক বলে তিনি আমাদের জানান।


সিডনি থেকে ক্রীড়ামন্ত্রী বিরেন শিকদারের সাথে খেলা দেখতে এসেছিলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী শিকদার। তিনি জানান, দলের জয়ে তারা সবাই খুশি এবং পরের ম্যাচ জেতার ব্যাপারেও ভীষণ আশাবাদী।
সিডনি থেকে সাকিব ও সাজিদ দুই ভাই দেশ থেকে বেড়াতে আসা তাদের বাবাকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন। সাকিব আবার স্থানীয় বাংলাদেশ লীগে নিয়মিত খেলেন। তাই ক্রিকেট নিয়ে তার উচ্ছ্বাসও বেশি।

লাকেম্বা থেকে জালাল উদ্দিন তার বৌকে নিয়ে এসেছিলেন খেলা দেখতে। তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন , যত কাজই থাক না কেন, ঘরের মাঠে নিজ দেশের খেলা তো আর মিস করা যায় না। তাই ব্যস্ততার মাঝেও খেলা দেখতে চলে এসেছেন তিনি। এখানে এসে ক্লান্তি ভুলে গেছেন।


লিভারপুল থেকে আসা শাওন বলেন, ‘এই খেলা দেখার জন্য অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে ছিলাম। আজকে এসে মনটা ভরে গেল। এতো বাংলাদেশী আগে কখনও একসাথে দেখিনি।’
রকডেল ও কোগরা থেকে অমিত, শাওন, রাহাত, শুভ, ইফতি, রাহাত সহ তাদের প্রায় ৩০জন বন্ধুবান্ধব একসাথে খেলা দেখতে এসেছিলেন। তাদের সবার একটাই কথা- বাংলাদেশ তাদের হৃদয়ে, হার-জিতে কিছু যায় আসেনা। দলের খেলা দেখতে তারা সবখানে যাবেন বলেও জানালেন।


প্রবাসি মানুষগুলোর এই উত্তেজনা আর আনন্দ হয়তো আবার দেখা যাবে শনিবার, সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে,  ব্রিসবেনের গাবায়। যদিও আবহাওয়াজনিত কারণে সে ম্যাচ নিয়ে কিছুটা সংশয় এখনো রয়ে গেছে।

এমআর/আরআইপি/এসআরজে