শীতে গাড়ির ইঞ্জিন ঠিক রাখতে যেসব ভুল করবেন না
শীতে গাড়ির ইঞ্জিন ঠিক রাখতে যত্ন নিন
শীতের সময় গাড়ির ইঞ্জিন স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি চাপের মুখে পড়ে। কম তাপমাত্রায় ইঞ্জিন অয়েল ঘন হয়ে যায়, ব্যাটারির শক্তি দ্রুত কমে, কুল্যান্টের গুণাগুণ নষ্ট হতে পারে যা সামান্য ভুলের কারণে বড় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই শীত এলেই গাড়ির মালিকদের কিছু সচেতনতা জরুরি।
নিচে এমন কিছু সাধারণ ভুল তুলে ধরা হলো, যেগুলো এড়িয়ে চললেই শীতকালেও গাড়ির ইঞ্জিন থাকবে ঝামেলামুক্ত।
১. ইঞ্জিন প্রিহিট না করেই গাড়ি চালু করা
অনেকেই ভাবেন আধুনিক গাড়িতে ইঞ্জিন হিট করার দরকার নেই। আসলে শীতে ইঞ্জিন অয়েল ঘন হয়ে যায়, যা ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ অংশে দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। আপনি যদি ইগনিশন অন করেই সঙ্গে সঙ্গে গতি তুলেন, তাহলে ইঞ্জিনের ঘর্ষণ বাড়বে। কী করবেন? গাড়ি চালু করে অন্তত ৩০–৬০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। এতে অয়েল সঠিকভাবে সার্কুলেট হবে।
২. কম গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা
শীতকালে ঘন অয়েল ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ভুল গ্রেডের অয়েল ব্যবহার করলে স্টার্ট নিতে সমস্যা, মাইলেজ কমে যাওয়া এবং ইঞ্জিনের ক্ষয় বাড়তে পারে। কী করবেন? শীতের উপযোগী ‘উইনটার রেটিং’ সহ মাল্টিগ্রেড অয়েল ব্যবহার করুন, যেমন-৫ওয়াট-৩০ওয়াট, ০ওয়াট-20ওয়াট গাড়ির ম্যানুয়াল অনুযায়ী।
৩. ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা
শীতে ব্যাটারির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সকালে ‘ক্র্যাঙ্কিং’ স্লো হয়, কখনো পুরোপুরি স্টার্ট নেয় না। এক্ষেত্রে ব্যাটারির ভোল্টেজ, টার্মিনাল পরিষ্কার, পানির লেভেল (যদি প্রয়োজন হয়) নিশ্চিত করুন। দুই-তিন বছরে ব্যাটারি বদলানো উত্তম।
৪. কুল্যান্ট চেক না করা
অনেকে এখনো শুধু পানি ব্যবহার করেন। শীতে এটি ইঞ্জিন ব্লকে বরফ জমার ঝুঁকি তৈরি করে এবং ইঞ্জিন হেড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অ্যান্টিফ্রিজ মিশ্রিত কুল্যান্ট (৫০/৫০ রেশিও) ব্যবহার করুন। রেডিয়েটর ক্যাপ ও লিক আছে কি না এগুলোও পরীক্ষা করুন।
৫. টায়ারের প্রেশার উপেক্ষা করা
ঠান্ডায় টায়ারের এয়ার প্রেসার স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত কমে যায়, যা গাড়ির লোড, ব্রেকিং ও মাইলেজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্য প্রতি সপ্তাহে একবার টায়ারের প্রেসার চেক করুন। কম থাকলে ম্যানুফ্যাকচারার নির্ধারিত PSI অনুযায়ী ঠিক করুন।
৬. রাতভর গাড়ি খোলা স্থানে ফেলে রাখা
খুব ঠান্ডা পরিবেশে গাড়ি বাইরে থাকলে ইঞ্জিন, ব্যাটারি, ফ্লুইড সবই অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়, ফলে সকালে স্টার্ট হতে সময় নেয়। এজন্য সম্ভব হলে গ্যারেজে রাখুন। না হলে গাড়ির কভার ব্যবহার করুন।
৭. নিয়মিত সার্ভিসিং এড়িয়ে যাওয়া
শীতে ইঞ্জিনের ছোট সমস্যা দ্রুত বড় হয়ে যেতে পারে। তাই অনেকেই যত্ন না নেওয়াই বড় ভুল। এজন্য এয়ার ফিল্টার, ফুয়েল ফিল্টার, স্পার্ক প্লাগ, বেল্ট-পুলি সবকিছু পরীক্ষা করুন। বছরে অন্তত একবার সার্ভিসিং করানো গুরুত্বপূর্ণ।
৮. লো-কোয়ালিটি ফুয়েল ব্যবহার করা
কম মানের তেল শীতে বেশি ঘন হয় এবং ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়। তাই বিশ্বস্ত পাম্প থেকে অকটেন বা ডিজেল নিন। প্রয়োজনে ফুয়েল অ্যাডিটিভ ব্যবহার করতে পারেন।
৯. ইঞ্জিন অয়েল লেভেল উপেক্ষা করা
শীতে অয়েল দ্রুত ঘন হয়ে ইঞ্জিনে চাপ বাড়ায়। লেভেল কম থাকলে ইঞ্জিন ড্যামেজ হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। এজন্য প্রতি ১০-১৫ দিন পর ডিপস্টিক দিয়ে অয়েল লেভেল চেক করুন।
আরও পড়ুন
পুরোনো গাড়ি কিনে জিততে চাইলে খেয়াল রাখুন ৩ বিষয়
কতদিন পর পর গাড়ি পরিষ্কার করানো ভালো
কেএসকে/এএসএম