বাঙালি খাবারের খোঁজে পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিংয়ে
বাঙালি খাবারের খোঁজে বিউটি বোর্ডিংয়ে, ছবি: লেখকের সৌজন্যে
মো. রাহুল শেখ
ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের কথা বললেই যে জায়গার নাম প্রথমে আসে, তা হলো পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের ১ নং শ্রীশদাস লেনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিং। এটি পুরাতন দোতলা ভবন, যার নান্দনিকতা সবাইকে আকৃষ্ট করে। এর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অনেক। ১৯৪৯ সালে প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলিনী মোহন সাহা এটি প্রতিষ্ঠা করেন। নলিনী মোহন সাহার বড় মেয়ে বিউটির নামানুসারে নামকরণ করা হয় বিউটি বোর্ডিং।
এটি এমন এক ঐতিহাসিক স্থান; যেখানে বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং পাঠকদের আড্ডা বা মিলনস্থল ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে এখানে ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকার অফিস ছিল। এখান থেকেই কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিউটি বোর্ডিংয়ে আক্রমণ করে। এ হামলায় প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহাসহ ১৭ জন শহীদ হন। ফলে এটি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।

পুরান ঢাকায় অবস্থান করে এখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা হলো। এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গিয়ে প্রথমেই এলো বিউটি বোর্ডিংয়ের নাম। অবস্থানও দেখা গেল খুব কাছেই। যেই ভাবনা সেই কাজ। উদ্দেশ্য বিউটি বোর্ডিং পরিদর্শন এবং বাঙালি খাবার খাওয়া। পুরান ঢাকার বাংলাবাজার থেকে শ্রীশদাস লেন ধরে হেঁটে পৌঁছে গেলাম বিউটি বোর্ডিংয়ে।
আরও পড়ুন
ঢাকার যেসব স্থানে দেখা মিলবে কাশফুলের
কাপ্তাই হ্রদের বুকে এক টুকরো দ্বীপ কাট্টলী
প্রবেশের আগেই পুরাতন ইটের তৈরি দেওয়াল এবং ভঙুর একটি গেট দেখা গেল। গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই পুরাতন দোতলা ভবন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেখা গেল। তাদের আতিথেয়তা অকল্পনীয় সুন্দর। এরপর কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি এবং কথাবার্তার মাধ্যমে এর সম্পর্কে নতুন কিছু জানার সুযোগ হলো। এবার বাঙালি খাবার খাওয়ার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো।

খাবারের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ খাবারের তালিকা দিলেন। যেগুলোর মধ্যে ভাত, ডাল, সবজি এবং বিভিন্ন প্রকারের ভর্তা আছে। তিন পদের ভর্তা, ডাল, সবজি এবং ভাত খেলাম চাহিদামতো। তৃপ্তি সহকারে খাবার এবং পরিবেশন পদ্ধতি মুগ্ধ করে তুললো। বলে রাখা ভালো, খাবার পরিবেশনেও বাঙালিয়ানার ছোঁয়া ছিল। বর্তমানে আধুনিকায়নের যুগে এ খাবার এবং পরিবেশন পদ্ধতি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে খাবারের মূল্য কিছুটা বেশি বলেই মনে হয়েছে। এখানকার শান্ত পরিবেশ এবং খাবার পরিবেশনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রশংসার দাবিদার।
ভ্রমণপিয়াসী এবং বাঙালি খাবার পছন্দ করেন এমন ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান থাকবে দুপুর ১২টার পর বিউটি বোর্ডিংয়ে প্রবেশ করবেন। মূলত দুপুর ১২টার আগে কোনো খাবার পরিবেশন করা হয় না। এ ছাড়া এটি বর্তমানে ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে একটি পছন্দনীয় জায়গা। শুরু থেকেই এটি থাকার ব্যবস্থা ও বাঙালি খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
এসইউ/এমএস