সন্তান হারানো মায়ের কান্নায় নীরব রাস্তা, স্বেচ্ছাসেবকরা করছেন খোঁজ
চারপাশে ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই কোলাহল। মাইলস্টোন স্কুলের পাশ দিয়ে কেউ যাচ্ছিল দোকানে, কেউ ফিরছিল নামাজ পড়ে। কেউ কেউ হয়তো তখনো স্কুলের ছুটির অপেক্ষায়। কিন্তু দুপুর ১টা ৬ মিনিটে আচমকাই ছন্দপতন। বিকট শব্দ আর আগুনের হলকা যেন মুহূর্তে থমকে দিল পুরো এলাকার নিশ্বাস। রাজধানীর উত্তরা এলাকার ব্যস্ত সড়কে তখন নেমে এল এক বিষণ্ন নীরবতা। ছবি: মাহবুব আলম ও জাগো নিউজ
-
তার মধ্যেই কিছৃু দৃশ্য হৃদয়ে গেঁথে থাকে স্কুল ইউনিফর্ম পরা একটি ছোট্ট ছেলেকে খুঁজছেন কান্নাভেজা মুখের এক মা। কাঁপা কণ্ঠে শুধু বলছেন, ওই তো স্কুলেই ছিল, একা একা তো যেত না কোথাও…
-
চারপাশে স্বেচ্ছাসেবকরা ছুটছেন, কেউ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে, কেউ অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের বহনে, কেউ মোবাইলে ছবি মিলিয়ে জিজ্ঞেস করছেন -এই শিশুটিকে চিনেন?
-
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করা একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুপুর ১টার কিছু পরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে ধাক্কা খায়। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এই ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলজুড়ে ছুটে আসেন দমকল বাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। কিন্তু তার আগেই আতঙ্ক, ধোঁয়া আর দগ্ধ দেহে ভরে ওঠে গোটা এলাকা। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও স্টাফ। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পৌঁছে বহু শিশুকে চিনে উঠতে পারছিল না তাদের পরিবার।
-
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মা, তার আট বছরের ছেলে স্কুলে গিয়েছিল সকালে। দুপুরে অফিস থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসেন। বলছিলেন, শুধু বলছে বিমান পড়ে গেছে, আমি ছবি দেখি, আমার ছেলের ব্যাগ ওই দোতলার জানালায় ঝুলে আছে।
-
এরকম অসংখ্য মা-বাবা আর অভিভাবক আজও হাসপাতাল থেকে থানায়, স্কুল থেকে দাফতরিক দৌঁড়, শুধু একটিবার সন্তানের মুখ দেখতে চান।
-
ঘটনার পরপরই এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের তরুণরা ছুটে আসেন। কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ সাহায্য করছেন অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে, আবার কেউ বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে দাঁড়িয়ে আহত শিশুদের নামের তালিকা তৈরি করছেন।
-
দগ্ধ অবস্থায় যেসব শিশু হাসপাতালে পৌঁছেছে, তাদের অনেকে কথা বলতে পারছে না। আবার কারও কাছে পরিচয়পত্র নেই। অনেক সময় ছোট শিশুরা নিজেদের নাম বলতে পারে না কিংবা ভয়ে চুপ হয়ে গেছে।
-
বিধ্বস্ত এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাইলট, স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মী, শিশুও রয়েছে নিহতদের তালিকায়। আহত শতাধিক মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গেছে যে দৃশ্য, তা হলো -হারানো সন্তানের খোঁজে ছুটে চলা মায়েদের কান্না।