কৃষি ও প্রকৃতি

মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের সম্ভাবনা

ঝিনাইদহে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পরীক্ষামূলক তরমুজ আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক আব্দুর রহিম বাদশা। তার তরমুজ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করছেন অনেকেই। ফলন ও স্বাদে খুশি কৃষকসহ কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ব্লকে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশের মাঠে তরমুজ চাষ করেন কৃষক আব্দুর রহিম বাদশা। নিজ উদ্যোগে বীজ সংগ্রহ করে ৫২ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ ফলের বীজ রোপণ করা হয়। তরমুজ গাছের গোড়ার আর্দ্রতা বজায় রাখতে ব্যবহার করা হয় মালচিং পদ্ধতি। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তৈরি করা হয়েছে মাচা। তাতেই ঝুলছে তরতাজা তরমুজ।

কৃষক আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, ‘৫২ শতাংশ জমিতে ১১টি মাচা বা শেডে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে এ আবাদ করেছি। ক্ষেতে সবমিলিয়ে ২ হাজারের বেশি ফল ধরেছে। ফলের আকার, রং, স্বাদ ও মান অত্যন্ত ভালো।’

তিনি বলেন, ‘একেকটি ফলের ওজন ৩-৫ কেজি হতে পারে। পরিপক্ব হলে এ তরমুজ অনেক সুস্বাদু। ২ মাসের পরিচর্যায় ফল ধরেছে। এক সপ্তাহ পরে ফল সংগ্রহ করা যাবে। সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বাগানের সব ফল বিক্রি করে দিয়েছি। গড়ে আড়াই মাসে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ করা যায়।’

এদিকে ব্যতিক্রমী তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম। ৬ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় পরিদর্শন টিম তরমুজ ক্ষেতে পৌঁছায়।

আরও পড়ুনগারো পাহাড়ে চাষ হচ্ছে ৫০ জাতের বিদেশি আঙুরমিরসরাইয়ে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে বাজিমাত

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ’ এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জোরদারকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী চলমান কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য এ টিম তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের ফসল অনুবিভাগ, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মপ্রধান ফেরদৌসী আখতার, উপপ্রধান রত্না শারমীন ঝরা, সিনিয়র সহকারী প্রধান প্রিয়াংকা দেবী পাল। পরিদর্শন টিমের সদস্যরা গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বাম্পার ফলন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পরিদর্শন টিমে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ মো. সেলিম রেজা, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নূর এ নবী, সদর উপজেলার হলিধানী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নূর এ নবী বলেন, ‘ব্যতিক্রমী গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে জেলায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা নিয়মিত কৃষকদের নানা ধরনের লাভজনক চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের ফসল অনুবিভাগ, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মপ্রধান ফেরদৌসী আখতার বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদী ফসল হওয়ায় কৃষক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলে মনে করি। এ ধরনের চাষে সার্বিক সহযোগিতা দিতে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।’

শাহজাহান নবীন/এসইউ/জেআইএম