সুস্থ থাকার জন্য ব্যয় করা প্রতিটি মিনিটই গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটার মতো সহজ ও কার্যকর ব্যায়াম আর নেই। নিয়মিত ১০ হাজার স্টেপ হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত। তবে প্রতিদিন এতগুলো স্টেপ হাঁটা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কর্মব্যস্ত জীবনে এই সময় বের করাও প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে। আবার অনেকেই ১০ হাজার স্টেপের কথা ভেবেই ভয় পান, হাঁটা শুরু করতেই চান না।
সাধারণভাবে ১০ হাজার স্টেপ হাঁটা মানে প্রায় ৫ মাইল পথ অতিক্রম করা। তবে এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে-উচ্চতা, হাঁটার গতি এবং স্ট্রাইড বা পদক্ষেপের দৈর্ঘ্যের ওপর এই দূরত্ব নির্ভর করে।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই পাওয়া যেতে পারে ১০ হাজার স্টেপ হাঁটার সমান উপকার। তাই ১০ হাজার সংখ্যাটি যদি আপনার কাছে বড় ও ভয়ঙ্কর মনে হয়, তাহলে সেটিকে নিজের সুবিধা অনুযায়ী ভাগ করে নিন।
কেন প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটবেনপেডোমিটার বা ফিটনেস ট্র্যাকিং ডিভাইসে দিনে ১০ হাজার কদম পূরণ করাকে অনেকেই ‘ম্যাজিক নম্বর’ বলে থাকেন। যদিও এর পেছনে নির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক সীমারেখা নেই।
তবে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওবেসিটি ফোরামের মতে, যারা প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ হাজার কদম হাঁটেন, তাদের শারীরিকভাবে ‘পুরোপুরি সক্রিয়’ বলা যায়।
এছাড়া স্বাস্থ্যবিষয়ক বেস্টসেলার বই ম্যানপো-কেই দ্য আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স অব স্টেপ কাউন্টিং-এ প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। বইটির লেখক ক্যাটেরিন টিউডর লক বলেন, একজন স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাটা অযৌক্তিক নয়। এছাড়া এই অভ্যাসের উপকারিতা যাচাই করতে বিভিন্ন গবেষণাও পরিচালিত হচ্ছে।
কীভাবে প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটবেনদীর্ঘ সময় বসে কাজ করার অভ্যাস থাকলে প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটা চ্যালেঞ্জিং মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ধাপে ধাপে এগোলে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
বর্তমানে স্মার্টফোনে এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে, যা দিন শেষে আপনার হাঁটার হিসেব নিজে থেকেই জানিয়ে দেয়। শুরুতে নিজের বর্তমান অবস্থান থেকে প্রতিদিন এক হাজার কদম বাড়ানোর চেষ্টা করুন। এই অভ্যাস সফল হলে দুই সপ্তাহ পর আরও এক হাজার কদম যোগ করুন। এভাবে ধীরে ধীরে আপনি ১০ হাজার কদমের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
১০ হাজার কদম পূরণের সহজ কিছু উপায় জেন নিন- ১. নাচুন মন খুলেপছন্দের গানের তালে কিছুক্ষণ নাচুন। এতে শরীর নড়াচড়া করবে, কদমও বাড়বে, পাশাপাশি মনও থাকবে ফুরফুরে। এতে করে ১০ হাজার কদমের লক্ষ্য পূরণ হতে থাকবে।
২. খেলাধুলা করুনযেকোনো হালকা খেলাধুলা সহজেই বেশি হাঁটতে সাহায্য করবে। চাইলে সঙ্গী হিসেবে পরিবার বা বন্ধুকেও যুক্ত করতে পারেন। আপনার পার্টনারকেও সঙ্গী বানাতে পারেন।
৩. বাড়ির কাজকে ব্যায়ামে পরিণত করুনঝাড়ু দেওয়া, ভ্যাকুয়াম করা, মোপিং, ডাস্টিং কিংবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো একঘেয়ে মনে হলেও এগুলো ভালো শরীরচর্চা। এসব কাজে আপনার ধারণার চেয়েও বেশি পদক্ষেপ পূরণ হয়। ৪. হাঁটতে হাঁটতে কথা বলুনফোনে কথা বলার সময় বা সহকর্মী ও প্রিয়জনের সঙ্গে আলাপচারিতার ফাঁকে হাঁটার অভ্যাস করুন। এতে সময় নষ্ট না করেই স্টেপ বাড়ানো যায়।
৫. ঘরে বসে কাজ করলে আরও সক্রিয় থাকুনওয়ার্ক ফ্রম হোম করলে কম বসুন, বেশি ঘোরাফেরা করুন। পানির বোতল হাতের নাগালে না রেখে একটু দূরে রাখুন। প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস বারবার উঠতে সাহায্য করবে।
৬. নিজে বাজার করুনঅনলাইন ডেলিভারি সুবিধাজনক হলেও এতে চলাফেরা কমে যায়। তাই সুযোগ থাকলে বাজারে গিয়ে নিজেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনুন। ছোট ছোট এই হাঁটাচলাগুলো দিন শেষে বড় সংখ্যায় যোগ হয়।
৭. অফিসে যাওয়ার পথে হাঁটার সুযোগ নিনবাড়ি ও অফিসের দূরত্ব বুঝে প্রয়োজনে কিছুটা আগেই গাড়ি বা পরিবহন থেকে নেমে হেঁটে অফিসে পৌঁছান। সম্ভব হলে গাড়ি বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করে হেঁটেই কর্মস্থলে যাওয়ার অভ্যাস করুন।
সূত্র: হেলথ শটস
আরও পড়ুন:শীতে গোসলে যে ভুল করলে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি, সতর্কতা জরুরি
এসএকেওয়াই/