নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ছয় বছরে চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী আবু সুফিয়ানের আয় ও সম্পদে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম-৮ থেকে উপ-নির্বাচনে দেওয়া হলফনামার সঙ্গে ২০২৫ সালের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামা তুলনা করলে দেখা যায়, তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ।
এসময়ে তার আয়ের উৎসে বড় কোনো কাঠামোগত পরিবর্তনের তথ্য না থাকলেও নগদ অর্থ, আবাসন সম্পদ ও পারিবারিক সম্পদের পরিমাণে দ্রুত বৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে।
আয়ের উৎস অপরিবর্তিত, অঙ্ক বেড়েছেহলফনামা অনুযায়ী ২০২৫ সালে আবু সুফিয়ানের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে মোট সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ টাকা।
তুলনামূলকভাবে ২০১৮ সালে তার আয় ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সে সময় বাসাভাড়া থেকে আয় দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে আড়াই লাখ টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ ছয় বছরে ভাড়াভিত্তিক আয় ও ব্যাবসায়িক আয় দুটিই প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
স্থাবর সম্পত্তি: কয়েক লাখ থেকে কোটি টাকায়স্থাবর সম্পত্তির তথ্য বিশ্লেষণে সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। ২০২৫ সালের হলফনামা অনুযায়ী, আবু সুফিয়ানের স্থাবর সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি টাকা। এতে রয়েছে ছয়টি ফ্ল্যাট এবং পাঁচ শতক অকৃষিজ জমি।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে অকৃষিজ জমির অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছিলেন সাড়ে ৮০ লাখ টাকা। দালান (আবাসিক বা বাণিজ্যিক) বাবদ দেখানো হয়েছিল মাত্র ৫ লাখ ২২ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তিতে নগদের আধিক্যঅস্থাবর সম্পত্তির হিসাবেও বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৫ সালের হলফনামায় অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে হাতে থাকা নগদ অর্থ ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এছাড়া ব্যাংকে জমা রয়েছে মাত্র ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং স্বর্ণালংকার রয়েছে ৫ লাখ টাকার। মোটর যান বাবদ সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।
২০১৮ সালে অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরে অস্থাবর সম্পত্তিও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
নগদ অর্থের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এর উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্ত্রীদের নামে সম্পদ: পারিবারিক সম্পদের বিস্তার২০২৫ সালের হলফনামায় পারিবারিক সম্পদের চিত্রও বিস্তৃতভাবে উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, তার দুই স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে মোট ৬০ লাখ টাকা। পাশাপাশি স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তাদের নামে যথাক্রমে ৭৫ লাখ টাকা ও ৮২ লাখ টাকার সম্পদের উল্লেখ রয়েছে। পারিবারিকভাবে এই সম্পদ বৃদ্ধির উৎস ও সময়কালও ভোটারদের আগ্রহের বিষয় হতে পারে।
মামলার সংখ্যা বেড়েছে, খালাসের দাবিআইনি অবস্থানের দিক থেকেও হলফনামায় পরিবর্তনের তথ্য রয়েছে। ২০১৮ সালে আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১৯টি। পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে ২৩টিতে পৌঁছায়। তবে ২০২৫ সালের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে একটি মামলা ছাড়া বাকি সবগুলো মামলা থেকে তিনি খালাস বা অব্যাহতি পেয়েছেন।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রশ্ননির্বাচনি হলফনামার উদ্দেশ্য হলো প্রার্থীদের আয়, সম্পদ ও আইনি অবস্থান সম্পর্কে ভোটারদের সামনে স্বচ্ছ তথ্য তুলে ধরা। আবু সুফিয়ানের ক্ষেত্রে ছয় বছরে আয় সীমিত হারে বাড়লেও সম্পদের মূল্য যেভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, তা স্বাভাবিকভাবেই ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী, হলফনামায় দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে। এসব তথ্য ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা।
এমআরএএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম