আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, বদনজর সত্য। (সহিহ বুখারি: ১০/২১৩) অর্থাৎ বদনজরের কুপ্রভাব পড়ে এটা অমূলক বা ভিত্তিহীন কোনো ধারণা নয়, এটা সত্য। আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা বদ নজরের খারাপ প্রভাব বাঁচতে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর, কারণ তা সত্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৩৫০৮)
বদনজর থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) পড়া অত্যন্ত উপকারী। এসব আয়াত আল্লাহর হেফাজত নিশ্চিত করে এবং অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা:রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে বদনজর ও অকল্যাণ থেকে বাঁচাতে বিশেষ একটি দোয়া পাঠ করতেন—
"বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু'যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি..."
অর্থ: আল্লাহর নামে তোমার জন্য ঝাড়ফুঁক করছি—তোমাকে যেন সব কষ্ট, বদনজর ও হিংসুকের ক্ষতি থেকে আল্লাহ হেফাজত করেন। আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করুন, আল্লাহর নামে।
করণীয় সমূহ:কুরআন তেলাওয়াত করুন – নিয়মিত সুরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ।
আয়াতুল কুরসী পড়ুন – প্রতিদিনের সুরক্ষা হিসেবে।
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ুন – রাতে পাঠ করা শ্রেয়।
দোয়া ব্যবহার করুন – নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য রাসুল (সা.)-এর দোয়া পড়তে পারেন।
তাই বদনজরকে ভিত্তিহীন মনে না করে এটা থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
বদনজর থেকে বাঁচতে ২ দোয়া১. সকাল সন্ধ্যায় সাত বার করে নিয়মিত এই দোয়া পাঠ করুন,
أَعُوذُ بكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِن كُلِّ شيطَانٍ وهَامَّةٍ ومِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাসান ও হোসাইনের (রা.) জন্য এ দোয়াটি পড়ে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় প্রার্থনা করতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.) ইসমাঈল ও ইসহাকের (আ.) জন্য এ দোয়া পড়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (সহিহ বুখারি: ৩৩৭১)
২. সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে পাঠ করুন, بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি লা য়াযুররু মাআ ইসমিহি শাইউন ফিল আরযি ওয়ালা ফিস সামাই ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম অর্থ: আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে যার নামের সাথে পৃথিবীর ও আকাশের কোন জিনিস ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।ওসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধায় যে ব্যক্তি তিনবার এ দোয়া পাঠ করবে কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৮)
এ ছাড়া সকাল-সন্ধ্যা তিন কুল অর্থাৎ সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার করে পড়তে পারেন। আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেন, সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার করে পড়ুন, এ আমল প্রতিটি (ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৫)
ওএফএফ/জেআইএম