ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিনের লম্বা ছুটি শুরু হয়ে গেছে। এমন লম্বা ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখী লাখো মানুষ। এতে রাজধানী ঢাকা এখন প্রায় ফাঁকা। রাজধানীর যেসব অঞ্চলে পশুর হাট রয়েছে এবং ঢাকা ছাড়ার প্রধান সড়কগুলোতে পরিবহনের বেশ চাপ দেখা যাচ্ছে। এতে যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে।
Advertisement
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে ছুটি শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিন ছুটি থাকবে। এমন লম্বা ছুটি পাওয়ায় বুধবার (৪ জুন) বিকেল থেকেই ঢাকা ছাড়তে থাকেন রাজধানীর কর্মব্যস্ত মানুষেরা। আর বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল থেকেই ঢাকা ছাড়ার ঢল শুরু হয়। এতে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে ঢাকা।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ অঞ্চলের রাস্তা বেশ ফাঁকা। শহরের রাস্তাগুলোতে পরিবহনের চাপ কম থাকায় তেমন যানজট নেই। তবে যেখানে গরুর হাট রয়েছে, সেই অঞ্চলের রাস্তায় কিছুটা যানজট রয়েছে। এছাড়া রাজধানী থেকে বের হওয়ার প্রধান দুটি পয়েন্ট গাবতলী ও সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে বেশ যানজট দেখা গেছে।
রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী অঞ্চল ঘুরে জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম জানান, সকাল থেকেই গাবতলীতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। সেইসঙ্গে গরুর ট্রাক দেখা যায় শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলীর রাস্তায়। এতে শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
Advertisement
তিনি জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাবতলী বাস টার্মিনালে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বিকেলে টার্মিনালে পরিবহনের সংকট দেখা যায়। অনেকেই যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। যাত্রীরা বাস ছাড়াও ট্রাক, পিকআপভ্যান, বিভিন্ন সড়কের লোকাল বাস, লেগুনায় গন্তব্যে যাত্রা করেছেন। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক, পিকআপভ্যান ও বাসের ছাদে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা করতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুনযানজটের কবলে গাজীপুরের দুই মহাসড়কঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার যানজটঝিনাইদহে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহতবিক্রিতে বৃষ্টির বাগড়া, দামে ক্রেতা খুশি হলেও অখুশি বিক্রেতাযাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ অঞ্চল ঘুরে জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফজলুল হক মৃধা জানান, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষ বেশ চাপ দেখা যায়। এতে সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে কিছুটা যানজট তৈরি হয়। তবে একদিকে ধোলাইপাড় ও অন্যদিকে শনির আখড়া পার হওয়ার পর রাস্তায় তেমন যানজট দেখা যায়নি।
শাহবাগ, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুর-১, মিরপুর-২, মিরপুর-১০ নম্বর ঘুরে জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু জানান, এসব অঞ্চলের রাস্তাগুলোতে পরিবহনের তেমন চাপ দেখা যায়নি। ফলে সবগুলো রাস্তায় প্রায় ফাঁকা। কোথাও যানজট নেই।
কমলাপুর, মতিঝিল, পল্টন, মগবাজার, বাংলামোটর অঞ্চল ঘুরে জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক অভিজিৎ কৌশিক জানান, এসব অঞ্চলের রাস্তাগুলোও বেশ ফাঁকা। রাস্তায় গণপরিবহন তুলনামূলক কম। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে- পরিবহন কম থাকায় যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এমনকি রিকশা চালকরাও বাড়তি ভাড়া চাচ্ছেন।
Advertisement
এদিকে রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, গুলশান, বনানী অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মেরুলবাড্ডা পশুর হাটকে কেন্দ্র করে বাড্ডায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ভাটারা ১০০ ফিট পশুর হাটের কারণে নতুনবাজারে কিছুটা যানজট দেখা যায়। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় এ অঞ্চলের রাস্তায় যানজট বেশ কম ছিল। রাস্তার একদিকে যানজট দেখা গেলেও, অন্যদিক ছিল ফাঁকা। আর গুলশান, বনানী, রামপুরা অঞ্চলের রাস্তা প্রায় ফাঁকা দেখা যায়।
গুলশানে কথা হয় আমেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের সময় ঢাকার অধিকাংশ মানুষ প্রতিবছরেই গ্রামে চলে যান। এ কারণে ঈদের সময় যানজটের নগরী ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়। এবার তো টানা ১০ দিনের ছুটি। এমন ছুটিতে অধিকাংশ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন এটাই স্বাভাবিক। পশুর হাট না থাকলে দেখতেন ঢাকার রাস্তায় মানুষই নেই।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক ঢাকা আর ঈদের সময়ের ঢাকা সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকায় যানজটের কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে মানুষ বোর (বিরক্ত) হয়ে যায়। কিন্তু ঈদের সময় এলে কয়েকদিন আমরা স্বস্তিতে নিশ্বাস নিতে পারি। শান্তিতে ঢাকার ভেতরে ঘোরাঘুরি করতে পারি। ঢাকা যদি সব সময় এমন হতো তাহলে কত ভালোই না হতো।
নতুন বাজারে কথা হয় ইসমিতা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মানিকনগর যাবো। ২০ মিনিট ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। বাসে উঠতে পাচ্ছি না। রাস্তায় বাস অনেক কম। যা দু-একটা আসছে, তাতে জায়গা নেই। রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছে। রাস্তায় যানজট না থাকলেও বাসে উঠতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম