ঈদ উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটিতে পাবর্ত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও জেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাজেকে পর্যটকের ঢল নামার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে এখানকার রিসোর্ট-কটেজে আগাম বুকিং শুরু হয়েছে। সাজেকের ৯৮টি রিসোর্ট-কটেজে প্রায় শতভাগ এবং রাঙ্গামাটির ৮০ শতাংশ হোটেল ও কটেজের বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
সাজেক রিসোর্ট কটেজ মালিক সমিতির তথ্যমতে, সাজেকে বর্তমানে ৯৮টি রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। রিসোর্টগুলোতে ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে আগাম বুকিং শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পর্যন্ত প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
ঈদের টানা ছুটিতে যেন পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে হ্রদ-পাহাড়ের শহর রাঙ্গামাটি। অতিথিদের বরণে প্রস্তুত এখানকার সরকারি ও বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্রগুলো।
রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের মোটেল ও কটেজ মিলে ৮৭টি রুম আছে, যাতে ১৭০ জন থাকতে পারেন। ৯ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বুকিং আছে। আকাশের অবস্থা ভালো হলে আরও বুকিং হবে। আশা করছি, এবার রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক আসবেন রাঙ্গামাটিতে।’
Advertisement
সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মন কাড়ছে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত পলওয়েল কটেজ অ্যান্ড ন্যাচার পার্ক। শহরের জিরো পয়েন্টে কাপ্তাই হ্রদের তীরঘেঁষা এই স্থাপনাটির লাভপয়েন্ট’র জন্যও বিখ্যাত।
পার্কটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে ১১টি কটেজে ৩৬ জন পর্যটক থাকতে পারেন। টানা বন্ধে ৮ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত শতভাগ কটেজই বুকিং আছে।
তিনি বলেন, আমাদের বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভালো। এবার বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য আমরা পার্কের সব রাউড ফ্রি এবং নৌভ্রমণে বিশেষ ছাড় দিচ্ছি।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে হোটেল-রিসোর্টে রুম বুকিংয়ের হিড়িকঈদে সিলেটে পর্যটক সমাগম নিয়ে শঙ্কাপর্যটকের ঢল নামার আশা, বরণে প্রস্তুত কক্সবাজাররাঙ্গামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘ঈদের টানা ছুটি এবং দেশে এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক হানাহানি না থাকায় এবার প্রচুর পর্যটক আসবেন বলেই আমরা আশা করছি। রুম বুকিং দেখে এটাই ধারণা হচ্ছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
Advertisement
রাঙ্গামাটির হ্রদে বোট পরিচালনার সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর ধরে জড়িত বোট ব্যবসায়ী রমজান আলী। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক আসবেন। আমাদের ঘাটে ১২৫টি, অন্যান্য ঘাটে আরও পাঁচ শতাধিক ট্যুরিস্ট বোট প্রস্তুত আছে। পর্যটকদের বরণে বোটগুলো মেরামত ও রং করাসহ প্রতিটি বোটে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট রাখা হয়েছে।
এদিকে ‘বাংলাদেশের দার্জিলিং’ খ্যাত পর্যটন উপত্যকা সাজেক মুখিয়ে আছে পর্যটকদের জন্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার ৯৮টি কটেজেই ছুটির দিনগুলোতে প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। গত বছরের ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩৮টি কটেজের মধ্যে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি পুনরায় চালু হলেও বাকি ৩৫টি এখনো চালু করতে পারেননি মালিকরা। বর্তমানে চালু ৯৮টি কটেজে প্রায় ২২০০ পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা আছে।
সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপর্ন দেব বর্মন বলেন, ‘সাজেকে যারা আসতে ইচ্ছুক তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, তারা যেন বুকিং না দিয়ে না আসেন। কারণ আগে আমাদের ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি ক্লাবে প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা করতে পারতাম। অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবার সেখানে আশ্রয় নেওয়ায় সেখানে কাউকে রাখা সম্ভব নয়। আবার বাড়তি পর্যটক এলে আমরা কিছু বাসাবাড়িতেও থাকার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু আগুনে সেই বাড়িগুলো পুড়ে যাওয়ায় এখন আর সেটিও সম্ভব নয়।’
রাঙ্গামাটি জেলা হোটেল-মোটেল সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে পর্যকটকের উপস্থিতি বাড়বে। কারণ এবার বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ বেড়েছে। ঝিরি-ঝরনাগুলোও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। অন্যান্য ঈদ মৌসুমে ৪-৬ দিনের ছুটি থাকলেও এবার ১০ দিনের টানা ছুটি। এটি পর্যটকদের আগমন ঘটার অন্যতম একটা বড় কারণ।
পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ রাঙ্গামাটি রিজিয়নের পুলিশ সুপার (এসপি) নিহাদ আদনান তাইয়ান জাগো নিউজকে বলেন, সাজেকসহ রাঙ্গামাটি শহরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের জন্য নির্দেশনা সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। সেখানে আমাদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। আশা করছি, এবারের ঈদের ছুটিতে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হবে।
এসআর/জেআইএম