আষাঢ় হলো শুরু। বর্ষার প্রথম দিন আজ। শান্ত বৃষ্টিপাতের মতো মন যাদের, তাদের হয়তো মনে পড়ে যাবে হুমায়ুন আহমেদের সিনেমা ‘দুই দুয়ারির’ গানটি — ‘বর্ষার প্রথম দিনে...’। ভীষণ গরমে প্রশান্তির জন্য মানুষ কদিন তাকিয়ে ছিল আকাশের দিকে। অবশেষে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলো বর্ষা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী এক সপ্তাহ টানা বৃষ্টি থাকবে।
Advertisement
বৃষ্টি-বিলাসী বাঙালির জন্য বর্ষাকাল নানান কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টি ভালোবাসতেন বাংলা ভাষার ভীষণ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। ভীষণ আহ্লাদে তার রচনায় বর্ষাকে পাওয়া যায়। এমনকি বর্ষাকালেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন এই সাহিত্যিক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় বর্ষা এসেছে ঘুরেফিরে নানান ভাবে বহুবার। সাহিত্যে বা গানে বর্ষা যেভাবে ধরা পড়ে তার প্রভাব পড়ে মানুষের মনেও। যেমন আকাশে মেঘ করলে নগরবাসী চুলায় খিচুড়ি চাপায়। যেন বর্ষা ও খিচুড়ি পরস্পরের পরিপূরক। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঝুম বৃষ্টিতে বেলকনিতে বসে চা খাওয়ার আনন্দও কম নয়। কাদামাটি মাখা শিশুদের উচ্ছ্বাস এই সময়ে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে চারপাশে।
আষাঢ় বাংলা বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। কৃষি ও প্রকৃতির ক্ষেত্রে বর্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্ষা প্রকৃতিকে করে তোলে সুফলা। এই সময়ের বৃষ্টি কৃষিকাজের জন্য ভীষণ জরুরি। গ্রীষ্মে বৃষ্টির অভাবে মাঠ শুকিয়ে যায়। আষাঢ়ের বৃষ্টি সেই শুকনো মাঠগুলোকে সতেজ করে আর ফসল ফলানোর জন্য প্রস্তুত করে। প্রকৃতি তখন ফিরে পায় নবজীবন। চারপাশ সবুজ হয়ে উঠলে তার প্রভাবে উদাস হয়ে ওঠে মানুেষর মন। এই ঋতুতে পদ্মফুল, শাপলা, কলমি ফুলের মতো জলজ ফুলগুলোও এ সময় প্রকৃতিকে করে তোলে আরও মনোমুগ্ধকর।
হিন্দু ধর্মানুসারে আষাঢ় মাসে যোগিনী একাদশী ও গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়। এই দিনগুলোতে বিশেষ পূজা ও আচার-অনুষ্ঠান করা হয়। আষাঢ় মাসকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন জায়গায় বর্ষা উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। এতে প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা বাড়ে। বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময় হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মের মানুষই কিছু কিছু অঞ্চলে আয়োজন করে শ্রাবণবিদায়ী উৎসব ‘শাওনের ডালা’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আষাঢ় মাসে শান্তি নিকেতনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। পরে সেটা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাময়।
Advertisement
এত এত রোমান্টিকতার পরও বর্ষা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন বড় নগরগুলোর মানুষেরা। কারণ বৃষ্টিতে তাদের চলাফেরা ভীষণভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গা। জলাবদ্ধতা রীতিমতো জনজীবনকে অচল করে দেয়। এমনকি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে, বর্ষা যেমন আশীর্বাদ, তেমনি মাঝে মাঝে অভিশাপও হয়ে ওঠে। অতিবৃষ্টি নদীভাঙন, কখনও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে। রোগ-জীবাণুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। তাই বর্ষা যেমন সৌন্দর্যের, তেমনি তা সচেতন থাকার কথাও মনে করিয়ে দেয়।
আরএমডি/এএমপি/এএসএম