ফেনীর মুহুরী নদীর পানি শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর থেকে কমতে শুরু করেছে। ফলে শনিবার (২১ জুন) সকাল থেকে ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানি কমতে শুরু করায় নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পানি কমে যাওয়ায় নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা নিজ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে ঘরে কাদা থাকায় স্বাভাবিকভাবে বসবাস শুরু করতে আরও দু-তিনদিন সময় লাগবে।
মুহুরী নদীর পানি কমে গেছে। তাই ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে আর পানি ঢুকছে না বলে জানান ফুলগাজীর বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হতদরিদ্র, দিনমজুর ও প্রান্তিক কৃষকরা। মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া গ্রামের হাজী নুর মিয়া ভূঞা বাড়ির বাসিন্দা নাসিমা আক্তার। এক পুত্রবধূ ও দুই নাতিকে নিয়ে পানিবন্দি আছেন দুদিন। সরকার থেকে সুপেয় পানি ও খাবার পাননি বলে অভিযোগ তার।
নাসিমা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আকাশে মেঘ দেখলে এখন মনে ভয় লাগে। কখন নদীর বাঁধ ভেঙে পানিতে ভাসিয়ে নেয় সেই আশঙ্কায় থাকি। হঠাৎ পানি ঢুকে সব ডুবে গেছে। জিনিসপত্র সরাবো, না হাঁস-মুরগি বাঁচাবো, না বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে আশ্রয় নেবো— এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি পার করেছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেজ রিডার নেপাল সাহা জানান, মুহুরী নদীর পানি শুক্রবার দুপুর থেকে কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সারাদিন বিপৎসীমার কাছাকাছি ছিল পানি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ভাঙন স্থান দিয়ে এখন আর লোকালয়ে পানি ঢুকছে না। পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।
এর আগে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজার সংলগ্ন মনিপুর গ্রামে বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
একইদিন রাতে ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায়। এতে মুহূর্তেই পানি ঢুকে উত্তর বরইয়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি প্লাবিত হয়। শনিবার সকাল থেকে পরশুরাম ফুলগাজী এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয় পানি প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসআর/জেআইএম