টুংটাং নোটিফিকেশনের শব্দ কানে আসলেই মনটা আস্থির হয়ে যায়। কৌতুহল বাড়তেই থাকে – দেখি কে কী বললো! শুধু নোটিফিকেশনটা দেখেই রেখে দিবো। তারপর আধাঘণ্টা যে কীভাবে পার হয়ে যায়, টেরও পাওয়া যায় না। আপনার সঙ্গেও কি এমন হয়?
প্রাপ্তবয়স্ক ও ব্যস্ত মানুষদেরও এমন রোজ হচ্ছে, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না তারা। তাহলে ভেবে দেখুন তো বয়ঃসন্ধিকালে থাকা একজন কিশোর-কিশোরীর মনোযোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এটি কতোটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু যখন এই মাধ্যমগুলোর ব্যবহারে ভারসাম্য থাকে না, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে, তখন নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি বড় জরিপে দেখা গেছে, দিনে তিন ঘণ্টার বেশি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউব ব্যবহার করলে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যায়। অন্যদিকে যারা দিনে তিন ঘণ্টার কম সময় দেয়, তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, সেই সঙ্গে সামাজিক এবং মানসিকভাবে স্থিতিশীল।
বয়ঃসন্ধিকালে মনের উঠানামা
এই বয়সটা এমনিতেই সংবেদনশীল; একদিকে পড়াশোনা, অন্যদিকে বন্ধুদের সঙ্গে মানিয়ে চলা, পরিবারে নিজের অবস্থান বোঝা, শরীর ও আবেগে পরিবর্তন। এই অবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘সবাই কত ভালো, আমি কেন পারছি না’ ধরনের ভাবনা মানসিক চাপে রূপ নেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বয়সে সামাজিক মাধ্যমে অন্যদের ‘সাজানো জীবন’ দেখে নিজেদের জীবনকে ফেলনা ভাবতে শুরু করেন তারা। এতে তাদের আত্মসম্মান কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয় এবং পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। মন খারাপ, হতাশা ও একাকিত্বের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এমনকি আত্মঘাতী চিন্তাও বেড়ে যায়।
কিছু ভালো দিকও আছে
এই গবেষণায় আবার কিছু সুফলের কথাও বলা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, যারা দিনে ১ থেকে ৩ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় দেন তারা নিজেদের জীবনের উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ অনুভব করেন। এমনকি তারা পরিবার ও বন্ধুর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমেও উৎসাহী থাকে।
গবেষণাটি অস্ট্রেলিয়ার, তবে বাংলাদেশের চিত্রও খুব একটা ভিন্ন নয়। আজকাল বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী চোখ সারাদিন স্ক্রিনে আটকে থাকে, তারা ঘর থেকে বের হন না, খেলাধুলতে আগ্রহ পান না, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও করেন না। অনেক বাবা-মা ভাবেন, মোবাইলে থাকলে তো অন্তত ঘরে আছে; কিন্তু ওদের ভেতরে যে মানসিক ঝড় বইছে, সেটা বড়রা টের পান না।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন-
বিশেষজ্ঞরা গবেষণার ফলাফল দেখে বলছেন যে, ভালো ও খারাপ দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রয়োজন ভারসাম্য। এবং এই ভারসাম্যের ভিত্তি স্থাপন করতে হবে অভিভাবকদের। তারা বলছেন-
১. সন্তানকে দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম দেওয়া যাবেনা।
২. বিছানায় যাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৩. প্রতিদিন কিছু সময় রাখতে হবে ঘরের বাইরে খেলা, হাঁটা বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য।
৪. সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে অন্য শখ বা আগ্রহে সময় দিত হবে। যেমন- বই পড়া, আঁকা, গান শোনা ইত্যাদি।
৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে পরিবারে খোলামেলা আলোচনা কেরার পরিবেশ রাখতে হবে। কে কী দেখছে, কোন কনটেন্ট ভালো লাগছে না ইত্যাদি যেন সন্তান তার অভিভাবকদের বলতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোনো খারাপের উৎস নয়; বরং এটি কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কতটা সময় ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাই আসল ব্যাপার। ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব – সবই হতে পারে শেখার, আনন্দ পাওয়ার ও নিজেকে প্রকাশ করার মাধ্যম, যদি আমরা তা সচেতনভাবে ব্যবহার করি।
সূত্র: সাপোর্ট দ্য গার্ডিয়ান
এএমপি/এএসএম