ফেনীতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষত। পানির তোড়ে ধসে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি। ভোগান্তির সঙ্গে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেক মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় মংস্যসম্পদে আট কোটি ১৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিয়ে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। গরু, ছাগল ও মুরগি মারা গিয়ে ৬৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক বিভাগে। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। পানি গড়িয়ে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্যায় জেলায় প্রায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির মাঝে চারটি গরু, তিনটি ছাগল, একটি ভেড়া, সাড়ে ১০ হাজার বাণিজ্যিক মুরগি ও ২৩৫টি হাস মারা গেছে। এর বাইরে বন্যা কবলিত হয়ে অন্তত ২০ হাজার গরু, মহিষ, ছাগলসহ গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণও কম নয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, ‘জেলার চার উপজেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় ৮৪৫ হেক্টর আউশ, ৫৩৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি, ১৪ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর আদা, আড়াই হেক্টর হলুদ, ১১ একর টমেটো, ৬৮৯ হেক্টর বীজতলা ও ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর বস্তায় আদা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। কৃষি বিভাগ এখন ক্ষয়ক্ষতির টাকার অংক নিরূপণ করতে পারেনি।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার পানিতে জেলায় দুই হাজার ৩৩০টি পুকুর ডুবে গেছে। এতে চার কোটি ৯০ লাখ টাকার মাছ ও দুই কোটি ৮১ লাখ টাকার মাছের পোনা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এর বাইরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার খামারির অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘বন্যা এখনো শেষ হয়নি। কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির একটি বিবরণী আমাদের দিয়েছে। এটিকে আমরা চূড়ান্ত ভাবছি না। এখনো জেলায় অনেক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য হাতে পাবো।’
গত ৭ জুলাই বিকেল থেকে ফেনীতে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। পরদিন শহরে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়। সর্বশেষ ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে দেড়শতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়।
আরএইচ/