দেশজুড়ে

সরকারি প্রকল্পে মাটি লুট, হুমকিতে গ্রাম

সুনামগঞ্জে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুট করা হচ্ছে সুরমা নদীর মাটি। দিনরাত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে মাটি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষিজমি, ঘাটলাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গ্রামবাসী এর প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি সারের বাফার গুদাম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাফার গুদাম নির্মাণ করছে বাংলাদেশ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট রাজস্ব, ভ্যাট-ট্যাক্সের বিনিময়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জলিলপুর ও ব্রাহ্মণগাঁও মৌজায় সুরমা নদীর চর থেকে সাত লাখ ঘনফুট বালু ও বালুমিশ্রিত মাটি উত্তোলনের অনুমতি দেয় জেলা বালুমহাল কমিটি। পাশাপাশি বিষয়টি তদারকির জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত বালু উত্তোলন নিশ্চত করে জেলা প্রশাসকে রিপোর্ট করবেন বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।

‘জগৎ নামের ওই ঠিকাদার আওয়ামী লীগের আমলেও জলিলপুর গ্রামে ইচ্ছেমতো ড্রেজার চালিয়েছেন। পট পরিবর্তনের পরও তিনি সরকারি প্রকল্পের নাম করে দিনরাত ড্রেজার চালাচ্ছেন। তাই গ্রামবাসী তার নাম দিয়েছেন ‘ভয়ংকর ড্রেজার জগৎ’।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি প্রকল্পের কাগজ দেখিয়ে জলিলপুর গ্রামের পাশে সুরমা নদীতে দিনরাত ড্রেজার চালিয়ে বালু-মাটি উত্তোলন করে নৌকায় লোড করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, দিনের ১৩ ঘণ্টায় পাঁচ নৌকা মাটি প্রকল্পে যাওয়ার কথা থাকলেও যাচ্ছে ২-৩টি। উত্তোলিত বালু-মাটি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হবতপুরসহ শহরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করছেন স্থানীয় ঠিকাদার। সেইসঙ্গে সরকারি এই প্রকল্পে রাতে ড্রেজার চালানোর কোনো অনুমোদন না থাকলেও রাতভর ড্রেজার চালানো হচ্ছে। গত এক মাসে ৫০ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করা হয়েছে। ড্রেজারের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলেই মামলার ভয়সহ দেওয়া হচ্ছে নানা হুমকি।

আরও পড়ুন: বেঁচে থাকার সংগ্রামে জুলাই শহীদদের পরিবারসংরক্ষণের অভাবে পচে নষ্ট লাখ লাখ টাকার কাঁঠালগণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও অভিযুক্তদের নাম মিলছে না, আছে ‘আস্থার সংকট’

স্থানীয় ময়না মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘সরকারি প্রকল্পের নামে দিনরাত নদীতে ড্রেজার চলছে। এতে পুরো গ্রাম হুমকির মধ্যে পড়ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই মামলাসহ নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

সাব্বির মিয়া নামের আরেকজন জাগো নিউজকে বলেন, “জগৎ নামের ওই ঠিকাদার আওয়ামী লীগের আমলেও জলিলপুর গ্রামে ইচ্ছেমতো ড্রেজার চালিয়েছেন। পট পরিবর্তনের পরও তিনি সরকারি প্রকল্পের নাম করে দিনরাত ড্রেজার চালাচ্ছেন। তাই গ্রামবাসী তার নাম দিয়েছেন ‘ভয়ংকর ড্রেজার জগৎ’।”

‘সরকারি প্রকল্পের নামে দিনরাত নদীতে ড্রেজার চলছে। এতে পুরো গ্রাম হুমকির মধ্যে পড়ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই মামলাসহ নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

স্থানীয় হালিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘সরকারি প্রকল্পের নামে নদীর মাটি লুট করে জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জলিলপুর গ্রাম।’

এদিকে, জাগো নিউজের হাতে একটি কলরেকর্ড এসেছে। এতে শোনা যায়, ড্রেজার মেশিন চালানোর সময় কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন ঠিকাদার জগৎ।

আরও পড়ুন: জেলা প্রশাসনের জিম্মায় নেওয়া ৯০ গরুর হদিস নেইশিশুশ্রম কমছে, বদলে যাচ্ছে শ্রমের ধরনআওয়ামী সরকার যেতেই বিলবোর্ডে আয় বেড়েছে সিটি করপোরেশনের

পরে অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করতে অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে প্রতিবেদককে টাকার অফার করেন তিনি।

প্রকল্পের নির্মাণকাজ তদারকি করা বাংলাদেশ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের স্টোরকিপার আক্কাছুল হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘ড্রেজার মেশিনের সমস্যার কথা বলে সাইটে নিয়মিত মাটি দিচ্ছেন না ঠিকাদার জগৎ। গত এক মাসে মাত্র দুই লাখ ৮৩ হাজার মাটি তিনি সরকারি প্রকল্পে দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা জেরিন জাগো নিউজকে বলেন, রাতে নদীতে ড্রেজার চালানোর কোনো নিয়ম নেই। সরকারি প্রকল্পের নাম করে কেউ অনিয়ম করলে এবং তার সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/জেআইএম