জাতীয়

সচিবালয়ে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর, লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীরা

শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর চালিয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের লাঠিচার্জ করে সচিবালয় থেকে বের করে দেয়।

এরপর সচিবালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও শিক্ষার্থীদের ছোড়া ঢিলে আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের এক নম্বর গেট দিয়ে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তারা ভেতরে ঢুকে ৭ নম্বর ভবনের পেছন দিয়ে পূর্বদিকে যেতে থাকেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিয়ে আটকাতে পারেননি।

শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন। এরপর বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য সচিবালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। এ সময় সাউন্ড ছোড়ে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এরমধ্যে পুলিশের গাড়িও রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিচার্জে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেন।

হুড়োহুড়ি করে সচিবালয় থেকে বের হতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেরই জুতা খুলে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চত্বরে প্রবেশের গেট ও ৭ নম্বর ভবনের দক্ষিণ পাশে অনেক জুতা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা সচিবালয় থেকে বের হয়ে এক নম্বর গেটে অবস্থানকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হন।

আরও পড়ুন সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সব গেট বন্ধ

এরপর পুলিশ সচিবালয়ের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়।

এরপর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকে অবস্থান নেন। জিরো পয়েন্টের দিকে পুলিশ কয়েক দফা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সচিবালয়ের সামনের আব্দুল গনি রোডে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে সচিবালয় এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেন। এছাড়া উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। শিক্ষার্থীরা আসলেই সচিবালয়ের সবগুলো গেট বন্ধ হয়ে যায়।‌ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এত বড় দুর্ঘটনার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা বাতিল করতে গড়িমসি করেছে। তারা গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই ঘোষণাও দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা। ব্যর্থতার দায়ে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা এবং সচিবের পদত্যাগ দাবি করছি।

শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। এছাড়া ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ঘিরে সচিবালয়ের ভেতর এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকার বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয়।

আরএমএম/বিএ/এমএস