ট্রমায় ভুগছে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বেঁচে ফেরা শিশু শিক্ষার্থীরা। চোখের সামনে সহপাঠীদের পুড়ে অঙ্গার হতে দেখেছে তারা। ভয়াবহ সেই স্মৃতি চোখে ভেসে উঠতেই শিউরে উঠছে এই কোমলমতি শিশুরা।
ট্রমায় ভোগা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে কাউন্সেলিং সেন্টার চালু করেছে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের প্রবেশপথের ডানপাশে তিনটি সেন্টার রয়েছে। সেখানে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের ভিড়। বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশু শিক্ষার্থীরা আসছে কাউন্সেলিংয়ের জন্য।
রোববার (২৭ জুলাই) সকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায়, কাউন্সেলিং সেন্টারের সামনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভিড়। ভেতরে সেবা নিচ্ছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে শিক্ষকদের অনেকেও ছিলেন।
কাউন্সেলিং সেন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আদনান হাসান জাগো নিউজকে জানান, তিনটি কক্ষে তিনজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন মাইলস্টোনের দায়িত্বরত চিকিৎসক। বাকি দুজন এসেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা।
রোববার সকাল থেকে প্রায় ৫০ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন বলে জানান মাইলস্টোনের কাউন্সেলিং সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. শাহপারনেওয়াজ ইশা।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল ২৫-৩০ জনের মতো শিক্ষার্থী এসেছিল। আজ তার চেয়েও বেশি এসেছে। আজকে আমরা প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের পরামর্শ দিয়েছি।
শিক্ষক শিক্ষার্থীরা কী ধরনের সমস্যার কথা বলছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাহপারনেওয়াজ ইশা বলেন, রোগীদের হিস্ট্রি বা সমস্যার কথা সাধারণত গণমাধ্যমে বলা উচিত নয়। তারপরও যেহেতু বিমান বিধ্বস্তের পর ট্রমায় ভোগা শিক্ষার্থীরা আসছে, বিষয়টি অনেকটা ওপেন। তারা বিকট শব্দ শুনেছে। এখন ওই ধরনের কোনো শব্দ শুনলেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া তাদের ঘুম হচ্ছে না। খাবারে অরুচি এবং ঘটনার কথা মনে পড়লে অনেকে কান্না করছে। অনেকের আবার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে। আমরা দীর্ঘমেয়াদি এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য করণীয় কী, তা তাদের জানাচ্ছি। নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।
পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে সঙ্গে করে কাউন্সেলিং সেন্টারে এসেছেন তার মা। সেবা নিয়ে বেরিয়ে তিনি বলেন, বিমান বিধ্বস্তের দিন আমার ছেলেটা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। একেবারে ওর মাথার ওপর ছুঁয়ে গিয়ে ভবনের ওপরে পড়েছে বিমানটা। প্রথম দুইদিন ও ভালোমতো কানে শুনতে পাচ্ছিল না। এখন কিছুটা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এখন ছেলেটা রাতে গভীরভাবে ঘুমাতে পারছে না। খাওয়া-দাওয়া কম করছে। বিমানের শব্দ শুনলেই ভয় পাচ্ছে। সেজন্য ওর বাবা বললো কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে আসতে। এখানকার মিস (চিকিৎসক) ছেলেটাকে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। ওখান বের হওয়ার পর ও ভালো অনুভব করছে বলে জানাচ্ছে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ মাসুদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আগে থেকেই আমাদের এখানে কাউন্সেলিং সেন্টার ছিল। বিমান দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানে সেবার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। আগের চেয়ে চিকিৎসক বাড়ানো হবে এবং নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়া হবে।
এএএইচ/এএমএ/জিকেএস