শিক্ষা

উৎসুক মানুষ ঠেকাতে হিমশিম, ক্লাস শুরু নিয়ে দ্বিধায় কর্তৃপক্ষ

বিমান বিধ্বস্তের সপ্তম দিনেও ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। অনেকে সপরিবারে ঘটনাস্থল দেখতে আসছেন। কেউ কেউ ঘটনাস্থলে এসে ভিডিওকলে পরিবার-পরিজনদের দেখাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও আশপাশের পরিস্থিতি। উৎসুক জনতার এ ভিড়ে পরিবেশ স্বাভাবিক করতে পারছেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ফলে ক্লাস শুরু বা শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার তৃতীয় দিন থেকে তারা ক্যাম্পাসে সাধারণ মানুষের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রোববার (২৭ জুলাই) থেকে নবম-একাদশ শ্রেণির ক্লাস চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু করা যাবে, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মাইলস্টোনের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, দলবেঁধে একের পর এক মানুষ প্রবেশ করছেন। তারা পুরো ক্যাম্পাস ঘুরছেন। ঘুরে ঘুরে সব খুঁটিনাটি দেখছেন।

সবচেয়ে বেশি ভিড় মূল ঘটনাস্থল হায়দার আলী ভবনের সামনে। সেখানে সকাল থেকে জটলা। কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। সেজন্য সেখানে সিকিউরিটি গার্ড বসানো হয়েছে। এখন চলছে পুরো এলাকাটি ঘিরে দেওয়ার কাজ।

শুধু যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে জটলা করছেন তা নয়, অনেকে খুঁজছেন পাইলট তৌকির কোথায় পড়েছিলেন; সেই জায়গাও। দীর্ঘসময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করায় অনেকেই আবার শিক্ষার্থীদের হোস্টেল, অ্যাকাডেমিক ভবনের টয়লেটে ঢুকে পড়ছেন। এ নিয়ে পুলিশ ও সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে অনেককে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তেও দেখা যায়।

মাইলস্টোনের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ভোরে ফজরের নামাজের পর থেকে দলবেঁধে মানুষ আসছেন। তাদের ঠেকালে অনেকে বলেন ভেতরে লাশ গুম করার জন্য আটকে রাখছেন? এ ধরনের কথাবার্তার কারণে কর্তৃপক্ষ সবাইকে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে। সবাই ঘুরে দেখে যাক যে, এখানে কিছু নেই।

দিনে আনুমানিক কত মানুষ আসছে? এমন প্রশ্নে প্রহরী শফিকুল বলেন, সেভাবে তো হিসাব করা হচ্ছে না। তবে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ তো আসছে-যাচ্ছেই।

স্কুলের স্টাফ আব্দুল মান্নান বলেন, স্কুল চালু করলে সকাল ৭টার আগে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। ৭টার পর শুধু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রবেশ করে। তাছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীরা আসেন। ক্লাস শুরু করলেই তো গেট পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। তখন আবার গুজব ছড়াবে। সেজন্য ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত কিছুটা পেছানো হয়েছে।

শ্বশুর-শাশুড়ি, ৪ বছর বয়সী ছেলে, ৭ বছর বয়সী মেয়ে ও কলেজপড়ুয়া ছোট বোনকে সঙ্গে করে রোববার মাইলস্টোনের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে এসেছেন রোমানা আক্তার। কেন এসেছেন? জানতে চাইলে রোমানা জাগো নিউজকে বলেন, এটা কোনো প্রশ্ন হলো! এতবড় একটা ঘটনা দেখতে আসবো না? আগেও দু-দিন এসেছি। তখন সঙ্গে মেয়ে ও ছেলে আসছিল। আজ শ্বশুর-শাশুড়ি ও গ্রাম থেকে আসা ছোটবোনকে নিয়ে এসেছি।

বহিরাগতদের স্কুলে প্রবেশ নিষেধ। সেখানে আপনারা প্রবেশ করছেন কেন? এমন প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, সব জায়গায় তো আর বিমান পড়ে না। এমন ঘটনাও দেশে খুব কম ঘটে। আমাদের বাসা মিরপুর সাড়ে ১১-তে। কাছাকাছিই তো সবারই তো ঘটনা নিজ চোখে দেখতে ইচ্ছে করে, তাই না! সেজন্য এসেছি। স্কুলে তো ক্লাস হচ্ছে না। আটকে রাখারও তো কোনো কারণ নেই।

ঘটনাস্থল দেখতে এসেছেন বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ঢাকায় ব্যবসায়িক কাজে আসা মো. আশফাকুজ্জামান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ইসলামপুর থেকে পাইকারি কাপড় কিনি। এবারও মালামাল কিনতে এসেছি। মিরপুরে মেয়ে-জামাইয়ের বাসায় উঠেছি। জামাইয়ের সঙ্গে সকালে এখানে আসলাম। জামাই বললো—চলেন বিমান যেখানে পড়েছে, সেখানে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাসুদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা রোববার থেকে ক্লাস শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মানুষের এত চাপ যে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য রবি-সোমবারও বন্ধ রেখেছি। মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উৎসুক মানুষ ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাধা দিলে মানুষজন বিভিন্নভাবে চারদিকে জড়ো হয়ে আরও খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। বহু গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য আপাতত বহিরাগতদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তবে দ্রুতই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ২১ জুলাই দুপুর সোয়া ১টার দিকে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে সরকর। দগ্ধদের অনেকেই এখনো চিকিৎসাধীন।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মেহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বার্নে ৩৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সিবিআর ক্যাটাগরিতে ৯ জন। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি।

এএএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস