আগামী জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচনী আচরণবিধি মানা ও রক্ষায় ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
বুধবার (২০ আগস্ট) আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করে ৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে দলটি।
বৈঠক শেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমরা ৯ দফা প্রস্তাব তুলে দিয়েছি। আমারা আশঙ্কা করছি, আমাদের যেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আছে, পুলিশ, আর্মি, আনসার যারা আছেন তারা সঠিকভাবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে নাও পারেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে এগুলো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছি, যারা ভোটার নয়, এরকম তরুণ ছাত্র যারা আছে বিশেষ করে স্কুলছাত্র যারা আছে তাদেরকে এক ধরনের কেন্দ্রভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করতে পারে কিনা। কারণ আমাদের এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান জানান, মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পরে বার্ন ইউনিটে কিশোর ছাত্ররা স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় ছিলেন, ছাত্ররা পুরো অবস্থাটাকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। রোগীদের রক্তদানসহ সবকিছুতে যেটা পুলিশের পক্ষে হয়তো সুন্দর করে করা সম্ভব হতো না। মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সেজন্য আমরা অনুরোধ করেছি পুলিশ-আর্মির পাশাপাশি স্কুল ছাত্রদেরকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রাখতে। যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না এমন কাজে যারা ভোটার নয়, গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছে তাদেরকে যদি আমরা মোটিভেট করতে পারি এবং তারা যদি ভোটারদের এবং প্রার্থীদেরকে আবেদন জানানো হয় তাহলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তারা একটা বিরাট রোল করতে পারে।
নির্বাচনী ব্যয় কমানো ও রিটার্নিং অফিসারের উদ্যোগে সব প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানায় এবি পার্টি।
দলটির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, যদি ট্র্যাডিশনাল ইলেকশন করার চিন্তা করেন তাহলে আপনারা ১৪০০ মানুষের জীবন এবং হাজার হাজার মানুষের রক্তের জন্য দায়ী থাকবেন। আপনাদেরকে একটা রেভল্যুশনারি ইলেকশনের প্ল্যান করতে হবে। নতুন ধাঁচের ইলেকশনের চিন্তা করতে হবে। ট্র্যাডিশনাল জায়গায় যাবেন না। নতুন করে বিষয়গুলোকে ভাবেন।
ভোটকেন্দ্রগুলোকে প্রার্থীদের প্রভাবমুক্ত রাখতে ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ভোট কেন্দ্রের বর্তমান সংখ্যা হ্রাস এবং বড় মাঠসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ ইত্যাদি স্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবিও জানায় দলটি।
৯ দফায় আরও বলা হয়- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি অনুসরণ করা না গেলে উচ্চকক্ষের ব্যবস্থা না রাখা এবং সেক্ষেত্রে নিম্নকক্ষে ন্যুনতম ১০০ আসনে ভোটের সংখ্যানুপাতিক (পিআর) ব্যবস্থা প্রণয়ন করা, প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদেরকে প্রবাসে থেকে ভোটাধিকার প্রদানের অধিকার নিশ্চিত, দ্বৈত নাগরিকদের জাতীয় ও স্থানীয় সব নির্বাচনে প্রার্থী হবার অধিকার নিশ্চিত করা, মডেল নির্বাচনী ক্যাম্পেইন গাইডলাইন প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি বিতর্কের ব্যবস্থা রাখা, নির্বাচন কমিশনকে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে তরুণ ভোটারদের জন্য বিশেষ প্রচারাভিযান এবং শিক্ষামূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করা।
এক প্রশ্নের জবাবে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, যারা ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে এবং আমরাও বিভিন্ন কনসার্ন বলেছি। কনসার্নগুলো পূরণ করেই ভোট ফেব্রুয়ারিতে করা সম্ভব।
বৈঠকে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়দসহ সিনিয়র নেতারা অংশ নেন।
এমওএস/এনএইচআর/জিকেএস