আইন-আদালত

হাবিবুর রহমানসহ ৪ জনের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় একটি ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক তরুণকে গুলি এবং ওই এলাকায় আরও দুইজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৪ আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাবিবুর রহমানসহ ৪ জনকে আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

এর আগে গত ২৫ আগস্ট একই মামলায় তিনটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো, গণ-অভ্যুত্থানের সময় ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা যুবক আমির হোসেনকে গুলি। দ্বিতীয়, গুলি বাসিত খান মুসার (৭) মাথা ভেদ করে চলে যায়। এতে তার দাদি মায়া ইসলাম মারা যান। তৃতীয়, একই দিন রামপুরায় মো. নাদিম নামের আরও এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর ছাড়াও এই মামলার আসামি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।

আরও পড়ুন:

হাবিবুর রহমানসহ ৪ জনকে আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ হাবিবুরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

এই মামলার একমাত্র গ্রেফতার আসামি রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকার।

এর আগে ১০ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলা আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সেদিন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পলাতক ৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এর আগে, গত ৭ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ ও সাইমুম রেজা তালুকদার আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি ট্র্যাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর দাখিল করেন।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। এসময় তিনি রামপুরা এলাকায় তার বাসার কাছাকাছি পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যান। এ সময় পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে আমির আশ্রয় নেন একটি নির্মাণাধীন ভবনের চারতলায়।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের পিছু নিতে পুলিশও ওই ভবনের চারতলায় উঠে যায়। পুলিশ সদস্যরা তার দিকে অস্ত্র তাক করে বারবার নিচে লাফ দিতে বলেন। এক পুলিশ সদস্য তাকে ভয় দেখাতে কয়েক রাউন্ড গুলিও করেন। একপর্যায়ে ভয়ে আমির লাফ দিয়ে ভবনের রড ধরে ঝুলে পড়েন। ঠিক তখনই তৃতীয় তলা থেকে এক পুলিশ সদস্য তার পায়ে ছয়টি গুলি করেন। এরপর পুলিশ চলে গেলে দুই পা রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি ঝাঁপ দিয়ে কোনোরকমে তৃতীয় তলায় পড়েন।

ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর এক শিক্ষার্থী ও দু’জন চিকিৎসক তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।

এফএইচ/এসএনআর/এমএস