পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের শানিকদিয়ার মন্ডল মোড় কাঁচাবাজার। ভোরের আলো না ফুটতইে জেগে ওঠে এই বাজার। চরাঞ্চলের আশপাশের অন্তত ১০ গ্রাম থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে আনেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাজারে আসতে সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষকদের।
এছাড়া সড়কের দুর্দশার কারণে রোগী নিয়ে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না যেতে পারায় ঘটছে দুর্ঘটনা। আশঙ্কাজনক হারে বিদ্যালয়ে কমছে শিক্ষার্থী। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুতই সড়কটি পাকাকরণের দাবি এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর, ভগীরথপুর, রতনপুর, জয়েনপুর, বোয়ালগাড়ী ও ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েকটিসহ অন্তত ১০ গ্রামের চরে কৃষকের শ্রমে ঘামে ফলেছে সবুজ সতেজ সবজি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কলাবাগান ও সবজি। সম্প্রতি এসব অঞ্চলের পদ্মার চরে এমন সবুজ বিপ্লবে বদলে গেছে এলাকার কৃষি অর্থনীতি। এক সময়ের পতিত জমিগুলোতেই এখন সবুজ হাসি। মরিচ, কলা, কুমড়া, লাউ, ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, মিষ্টিকুমড়া ও মুলাসহ বিভিন্ন সবিজর আবাদ এখানে। এসব সবজি মন্ডল মোড় বাজারে নিতে হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভগীরথপুর থেকে ভুইড়ির ছাম মোড় পর্যন্ত সাড়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক হয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই সড়কেরই বেহাল দশা।
কৃষকরা বলছেন, এই বাজার থেকে ট্রাক ভরে পাইকার ব্যাপারীরা সবজি কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। বাইরের জেলার ব্যাপারীরা এই বাজার থেকে কাঁচামাল কেনায় কৃষকদের ভালো দাম পাওয়ার কথা থাকলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেহাল সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতেই কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত কাদাপানি। ফলে মাঠ থেকে তোলা ফসল ভ্যান বা মহিষের গাড়িতে আনাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এবড়ো থেবড়ো পথে গুণতে হয় বাড়তি ভাড়া। শ্রমিক ও পরিবহন সংকটে অনেক সময় ক্ষেতেই নষ্ট হয় কষ্টের ফসল।
ভগীরথপুরের জফির মাঝি বলেন, শুধু পদ্মার চর থেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার সবজি বাজারে যায়। নদীটুকু নৌকায় এলেও এখান থেকে বাজারে নেওয়ার উপায় নেই। মাথায় করে দফায় দফায় বাজারে নিতে হয়। ওই রাস্তাটুকু যদি পাকা করে দিতো, তাহলে কৃষকদের সবচেয়ে বেশি উপকার হতো।
ভবানীপুরের কৃষক শহিদুল বলেন, রাস্তা খারাপ হওয়ায় মাথায় করে সবজি বাজারে আনতে দেরি হয়ে গেছে। এজন্য এখন ব্যাপারীরা তেমন মাল টানছে না। এখন নেবে কম দামে।
তিনি বলেন, পদ্মার ওই চর ও এই চর মিলিয়ে হাজার হাজার বিঘা জমিতে খালি সবজি আর সবজি। এগুলোর যদি সঠিক মূল্য পাওয়া যেতো তাহলে কৃষকদের ভাগ্যই বদলে যেত। রাস্তার জন্য সেটি আর হচ্ছে না। আবাদ করে শান্তি নাই, সবজি বাজারে আনতে শান্তি নাই।
ভগীরথপুরের কৃষক হাসান বলেন, গাড়িতে করে মাল (সবজি) কি আনবো ভাই, হেঁটে চলার মতো উপায়ই তো নাই। এবড়ো থেবড়ো যাই থাক, শুকনা সময়ে তবুও ৫০ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা দিলে এক ঝাঁকি সবজি নিতে ভ্যান পাওয়া যায়। কিন্তু বৃষ্টি হলে ৫০০ টাকাতেও সেটা পাওয়া সম্ভব না।
এ ব্যাপারে পাবনা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী আফনান আজম রুদ্র বলেন, ওই এলাকাগুলোতে ব্যাপক পরিমাণ সবজিসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ হয়ে থাকে বলে জেনেছি। সড়ক না থাকায় কৃষকরা উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন। আগামী যে প্রকল্প পরিকল্পনা রয়েছে তাতে এই সড়কটি রাখার চিন্তা করেছি। অনুমোদন পেলে সড়ক নির্মাণ করা হবে।
এফএ/জিকেএস