* জাতীয় পার্টির দখলে থাকা আসনে সরব বিএনপি-জামায়াত* বিএনপির ওসমান ফারুক প্রার্থী হলে সরে যেতে পারেন অন্যরা * মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে এরইমধ্যে আলোচনায় জামায়াত প্রার্থী
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুককে ঘিরে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার পর দেশে ফিরে কিছুটা সক্রিয় হলেও বর্তমানে তিনি ফের দেশের বাইরে আছেন। তবে তার অনুসারীরা এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।
বিএনপি থেকে এ আসনে আরও মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জজকোর্টের জিপি অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা এবং যুববিষয়ক সম্পাদক ও করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন। তবে দলীয় সূত্র বলছে, যদি ড. ওসমান ফারুক মনোনয়ন চান অন্যরা স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াবেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এরইমধ্যে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. জেহাদ খানকে মাঠে নামিয়েছে জামায়াত। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই তিনি এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। পক্ষে সরব জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
এলাকার বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড. ওসমান ফারুক কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন না চাইলে বা না পেলে মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যেতে পারেন জামায়াতের ডা. জেহাদ খান।
আরও পড়ুন- বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতেরজামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়িবিএনপির মনোনয়ন চান চার নেতা, একক প্রার্থীতে উজ্জীবিত জামায়াত
এছাড়া এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হচ্ছেন জেলা সভাপতি মাওলানা আলমগীর হোসাইন তালুকদার, খেলাফত মজলিস থেকে প্রভাষক আতাউর রহমান শাহান এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এখানে আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন। টানা চারটি (২০০৮-২০২৪) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে রাতের ভোট, ভোট ডাকাতি ও বিনা ভোটে এমপি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসীর মন্তব্য, চুন্নুর পোস্টারে লেখা থাকত জাতীয় পার্টির মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এই কথাই সব বলে দেয়। বর্তমানে তিনি এলাকায় আসছেন না।
অতীতের নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হয়েছিলেন- ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের এমএ কুদ্দুস, ১৯৭৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এম ও গণি, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ড. মিজানুল হক ও ২০০১ সালে বিএনপির ড. এম ওসমান ফারুক (২০০১)। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের ছাড়ে এই আসনে জাতীয় পার্টির দখল অটুট ছিল। এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিএনপির কবির উদ্দিন আহমেদ জয়লাভ করেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ২০০, নারী ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৪৫০ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৩ জন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে কখনো পিছপা হইনি। আশা করি দল আমাকে বিবেচনা করবে।’
জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছি, আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলাম। আশা করি ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দেবে।’
জামায়াতের প্রার্থী কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. জেহাদ খান বলেন, ‘আমার প্রতিশ্রুতি হলো কোনো মানুষ যেন চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে প্রাণ না হারায়। নিয়মিত মেডিকেল ক্যাম্প, মাদক নির্মূল ও মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করবো। জনগণ যদি সমর্থন দেয়, আমি সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব।’
এফএ/এমএমএআর/জেআইএম