বায়ুদূষণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, নাগরিক জীবনে যানজট, শিল্পায়ন ও বিভিন্ন প্রকারের দূষিত পদার্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বায়ুর মান ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাই বায়ুদূষণ রোধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন।
বায়ুদূষণ রোধে এর আগে দেওয়া ৯ নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নির্দেশনা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা সম্পূরক আবেদন শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি উর্মি রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এসময় আদালত বর্তমানের বায়ুদূষণের পরিস্থিতি ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরিবেশের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন, উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী মো. শাহজাহান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী খসরুজ্জামান এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরশিদ আক্তার।
মনজিল মোরসেদ জানান, সম্প্রতিক সময়ে বায় দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়াই এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। আবেদনটি পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী দায়ের করেন। সেই আবেদনে শুনানি নিয়ে ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা ৩ সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আবেদনের শুনানিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত বছর ঢাকায় বায়ুর মান উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বিবাদীপক্ষ থেকে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ঢাকার বায়ু দূষিত হয়েছে। ফলে বায়ুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং ঢাকায় বসবাসরত মানুষের জীবন রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে বিবাদীদের ওপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত আদেশ দিয়ে ৯ দফা নির্দেশনা আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। ৩০ নভেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রিট করলে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করে। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি ৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল ঢাকা শহরে মাটি/বালি/বর্জ্য পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা, নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক রাস্তায় পানি ছিটানো, রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোঁড়াখুঁড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা।
এছাড়া কালো ধোঁয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা, সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে উক্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, অবৈধ ইটভাটাগুলি বন্ধ করা, পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতীত চলমান সকল টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা, মার্কেট/দোকানগুলিতে প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে রাখা এবং অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপ নেওয়া।
এফএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম