যুক্তরাজ্যের ট্রেনে ছুরিহামলার ঘটনায় যাত্রীদের প্রাণ বাঁচিয়ে নিজে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন গুরুতর আহত একজন রেলকর্মী। হামলাকারীকে আটকাতে এমন দুঃসাহসী ভূমিকার জন্য তাকে ‘নায়ক’ বলে আখ্যা দিয়েছে ব্রিটিশ পুলিশ।
গত শনিবার (১ নভেম্বর) ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজশায়ারের হান্টিংডনে লন্ডনগামী একটি ট্রেনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানায়, ৩২ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নাগরিককে এই হামলার একমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলায় আহত এক রেলকর্মী যাত্রীদের বাঁচাতে হামলাকারীকে ঠেকানোর চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন>>যুক্তরাজ্যে ট্রেনে ছুরিকাঘাতে অনেকে আহতযুক্তরাজ্যে ট্রেনে ছুরিহামলায় ২ ব্রিটিশ আটক, ‘সন্ত্রাসের যোগ নেই’ বলছে পুলিশমুসলিমদের নিরাপত্তায় বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ দেবে যুক্তরাজ্য
পুলিশ বলেছে, তার পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত বীরত্বপূর্ণ’ ছিল এবং এতে ‘অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে।’
এই ঘটনায় মোট ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসা শেষে রোববার রাতে ছাড়া পেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনার পর লন্ডন, বার্মিংহাম, লিডস, ইয়র্ক ও ম্যানচেস্টারের প্রধান রেলস্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অন্তত মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানায়, পিটারবরো থেকে ট্রেনে ওঠা ওই হামলাকারীর কাছ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী আরেকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হলেও তদন্তে প্রমাণ মেলেনি, ফলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশের ডেপুটি চিফ কনস্টেবল স্টুয়ার্ট কান্ডি বলেন, আমাদের তদন্ত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত নয় বলে আমরা নিশ্চিত। তিনি আরও জানান, তদন্তকারীরা হামলাকারীর অতীত এবং হামলার পেছনের ঘটনাগুলো যাচাই করছেন।
লন্ডন নর্থ ইস্টার্ন রেলওয়ের (এলএনইআর) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড হর্ন বলেন, আমাদের সহকর্মী ও যাত্রীদের জন্য এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আহত কর্মী এবং তার পরিবারের জন্য আমরা গভীরভাবে চিন্তিত।
আমিরা অস্তালস্কি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ছুরি হাতে লোকটি যাকে সামনে পাচ্ছিল তাকেই আঘাত করছিল। চারদিকে চিৎকার-চেঁচামেচি, রক্ত ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, মানুষ একে অপরকে পিষে ফেলছিল পালানোর চেষ্টায়। এটা ভয়াবহ ছিল।
ট্রেনের চালক অ্যান্ড্রু জনসন হামলার সময় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রেনকে হান্টিংডন স্টেশনের ধীরগতির লাইনে সরিয়ে আনেন, যাতে পুলিশ দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। তার এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে ট্রেড ইউনিয়ন ‘অ্যাসলেফ’।
ইউনিয়নের কর্মকর্তা নাইজেল রোবাক বলেন, তিনি যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা প্রশংসনীয়। তার দ্রুত সিদ্ধান্তের কারণেই উদ্ধারকাজ সম্ভব হয়েছে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী টমাস ম্যাকলকলান বলেন, সেদিন অনেকেই নায়ক ছিলেন— কেউ আহতদের কম্বল দিচ্ছিলেন, কেউ গরম রাখার প্যাকেট দিচ্ছিলেন। এমন মানবিক দৃশ্যগুলো ছিল অবিশ্বাস্য।
এ ঘটনায় ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ সোমবার পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র: বিবিসিকেএএ/