১৭ বছর আগে স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের কালো ছায়া। বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করবেন। সেই সময় ৭০ টাকা টাকায় কয়েক প্যাকেট বিস্কুট ও চানাচুর কিনে বাড়ির পাশের বটগাছের নিচে বসান ছোট্ট একটি টং দোকান।
সেই দোকানই এখন তার সংসারের প্রধান অবলম্বন। বর্তমানে দোকানে বিস্কুট, চানাচুর, চকলেটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্য বিক্রি করেন তিনি। এ দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালিয়ে খরচ চালাচ্ছেন সন্তানের স্কুলের। তবে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হচ্ছে না। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। স্বামী ছেড়ে গেলেও জীবন সংগ্রামে দমে যাননি তারিফা খাতুন।
গত ১৫ বছর ধরে এ দোকানের সামান্য আয়ে চলছে তারিফার জীবনযুদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, পরিশ্রম ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে সামান্য পুঁজি দিয়েই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব তারিফা সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তারিফা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু আমার স্বামী ছিল নেশাগ্রস্ত। তাকে আমার পাশে পায়নি। ছেড়ে চলে গেছে। পরে তালাক হয়ে যায়। এদিকে ছেলেও অনেক ছোট। হাতে টাকা পয়সা না থাকায় সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের কালো ছায়া। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করব। পরে অনেক চিন্তা করে বাড়ির পাশের বট গাছের নিযে একটি দোকান দিলাম। মাত্র ৭০ টাকা ছিল হাতে, তাই দিয়েই আমার পথচলা শুরু।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন থেকে আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছেলে রাসেল এখন কলেজে পড়ে। দোকানের পাশের ছোট বটগাছটা আজ বড় হয়েছে বড় হয়েছে আমার সন্তান। সেই সঙ্গে বড় হয়েছে আমার দোকান। এখন দিনে ৪-৫ হাজার টাকার বিক্রি হয় দোকানে। এই থেকেই চলে আমাদের সংসার।’
স্থানীয় বাসিন্দা আলি আসরাফ বলেন, ‘মেয়েটা অনেক পরিশ্রম করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে থাকে। তার ব্যবহার অনেক ভালো। এই এলাকায় সব মানুষ তারিফার দোকানে আসে যে কোনো প্রয়োজনে।’
রহনপুর এলাকার পেয়ারা ব্যবসায়ী বলেন, ‘বরেন্দ্র এলাকায় আমার পেয়ারার বাগান রয়েছে। তাই প্রতিদিন আসা হয়। রোদ থেকে এসে তারিফা আপার দোকানে বসে বিশ্রাম নেই কিছুক্ষণ। এই স্থানটি খুব শীতল, কিছুক্ষণ বসলে ভালো লাগে। আর আপার ব্যবহার খুব ভালো তাই সবাই এখানে আসে।’
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইসমাইল হক বলেন, ‘তারিফার দোকানের সামনে দিয়ে আমি পরিষদে যাওয়া আশা করি। তাকে সব ধরনের সাহায্য সহায়তা করব। মাত্র ৭০ টাকায় দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছে বিষয়টি আমি জানতাম না।’
তারিফার আশা সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পেলে দোকানটি আরও বড় কর করতে পারেন। এতে তার সন্তানের ভবিষ্যত আরও নিশ্চিত করতে পারবেন বলেই মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুনশেয়াই পিঠা বাগেরহাটের শীতকালীন ঐতিহ্য দেশের যেসব মুদ্রা হারিয়েছে, যেগুলো চলছে
সোহান মাহমুদ/কেএসকে/জিকেএস