গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিকভাবে এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এরপর জাতীয় লীগের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এনসিপি। পরে ফের তদন্তে নামে ইসি। তদন্তে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা না পেয়ে এক মাস ১০ দিনের মাথায় বাদ পড়লো নিবন্ধনের তালিকা থেকে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ইসি সচিব বলেন, পুনঃতদন্ত করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, ভোটে অংশগ্রহণ ও অতীত নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রমে জাতীয় লীগের ধারাবাহিকতা পাওয়া যায়নি।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্ধারিত সময়ে ১৪৩টি দল আবেদন করে গত জুনে। এরপর প্রাথমিক বাছাইয়ে ঝরে পড়ে ১২১টি আবেদন।
সরেজমিনে প্রথম ধাপে বাদ ৭ দলপ্রাথমিক বাছাইয়ের পর ২২টি দলের সরেজমিন তদন্ত হয়। তাতেই নিবন্ধন অযোগ্য হয় ৭টি দল। সেগুলো হলো- ফরোওয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি। বাকি দলগুলো নিয়ে মাঠ পর্যায়ের অফিস, কমিটিসহ অন্যান্য শর্তাদি তদন্ত করা হয়।
সবশেষ বাদ পড়লো যে ১১ দলআমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ।
আরও পড়ুনশাপলা কলিসহ নিবন্ধন পেলো এনসিপিচূড়ান্ত নিবন্ধন পেলো এনসিপিসহ তিন দল
এছাড়া, আদালতের আদেশ একটি এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টিকে আদালত নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ায় আদেশের কপির অপেক্ষায় রয়েছে ইসি।
তিনটি দলের নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত
এক মাস ধরে দুদফা পুনঃতদন্ত শেষে নিবন্ধন শর্ত পূরণ করায় মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি কে নিবন্ধন দেয় এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন।
দাবি আপত্তি শেষে মধ্য নভেম্বরে নিবন্ধন চূড়ান্ত করো হবে বলে জানান ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
নিবন্ধিত দলের সংখ্যা যতএটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বোধীন ইসি নবম সংসদ নির্বাচনের সময় ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দেয়। এরপর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়। কে এম নুরুল হুদা কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় নিবন্ধনযোগ্য কোনো দল পায়নি। তবে আদালতের আদেশে কয়েকটি দল পরে যুক্ত হয়। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়।
২০০৮ সালে শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধন পেলেও স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় আরপিও অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
২০১৭ সালে নিবন্ধিত দলগুলোর কমিটি ও অফিসের খোঁজে মাঠে নামে ইসি। শর্ত পালনে ব্যর্থ দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ধারবাহিকতায় পিডিপি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও জাগপার নিবন্ধন বাদ যায়।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য ও গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের আদেশে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বিএমজেপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) নিবন্ধন পেয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ বছর নিবন্ধন পুনর্বহাল হয় জামায়াতের এবং নিবন্ধন স্থগিত হয় আওয়ামী লীগের। সবশেষ আদালতের আদেশে নিবন্ধন পুনর্বহাল হয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
বর্তমানে ৫৩টি দলের নিবন্ধন রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ স্থগিত ও বাতিল রয়েছে ফ্রিডম পার্টি, ঐকবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও পিডিপির নিবন্ধন। সবশেষ আজ তিনটি দলের নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
এমওএস/কেএসআর/এমএস