লাইফস্টাইল

রেজ বেইট: কেন এই শব্দ হলো ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার

বর্তমান ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক ব্যবহার আর অনলাইন আলোচনার টক্সিক ধরন চিত্রায়িত করে দিচ্ছে বিশেষ এক শব্দ - রেজ বেইট। সম্প্রতি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে রেজ বেইটকে চুড়ান্ত করা হয়েছে।

রেজ বেইট কী?

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের মতে, রেজ বেইট হচ্ছে এমন অনলাইন কনটেন্ট যা, ইচ্ছাকৃতভাবে রাগ, বিরক্তি বা উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য তৈরি হয়। এর উদ্দেশ্য থাকে বেশি ট্রাফিক, ক্লিক বা এঙ্গেজমেন্ট পাওয়া।

সহজ কথায় — এমন পোস্ট, ভিডিও বা মন্তব্য যা মূলত আপনাকে রাগান্বিত করার জন্য বানানো। মিডিয়ায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্ররোচিত শিরোনাম, উদ্দেশ্যমূলক ভুল তথ্য, বিতর্কিত দাবি — সবই হতে পারে রেজ বেইট।

কেন এই শব্দ চূড়ান্ত হলো?

১. অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের ভাষা‑ডেটা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত এক বছরে রেজ বেইট শব্দটির ব্যবহারে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি হয়েছে

২. বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৫ ছিল এমন এক বছর যখন অনলাইন আলোচনায় রাগ, বিভক্তি, বিতর্ক, মিথ্যাচার - সব ছিল অতিশক্তিশালী। এই প্রেক্ষাপটে রেজ বেইট ডিজিটাল যুগের মানসিক উদ্বেগ, তথ্য‑হাইজ্যাক এবং সামাজিক বিভাজনের এক নাম হয়ে উঠেছে।

৩. রেজ বেইট ধরনের আরেকটি শব্দ হলো – ক্লিকবেইট। কিন্তু অর্থ এক নয়। ক্লিকবেইটের উদ্দেশ্য কৌতূহল জাগানো। কিন্তু রেজ বেইট বিশেষভাবে রাগকে ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করে।

অনলাইন ক্লান্তি, টক্সিসিটি ও মানসিক প্রভাব

রেজ বেইট কেবল গ্লোবাল ট্রেন্ড নয়, এটি আমাদের মনস্তত্ত্ব, মানসিক শান্তি ও সামাজিক পরিমণ্ডলে রাগের আগাছা বুনে চলেছে। বারবার এমন কনটেন্ট দেখলে ইমোশনাল ফ্যাটিগ বা মানসিক ক্লান্তি, কগনিটিভ ওভারলোড বা তথ্যের ভার, এবং ডুমস্ক্রলিং লুপস বা স্ক্রিন দেখা থামাতে না পারার মতো সমস্যা হতে পারে।

২০২৪ সালের শব্দ ছিল ব্রেন রট — যা আমাদের মানসিক অবক্ষয় ও অতিরিক্ত অনলাইন সময়ের প্রতিফলন ছিল। এবার রেজ বেইট দেখাচ্ছে — আমাদের রাগ নিয়ে কীভাবে ব্যবসা করা হয় ও আমাদের ইমোশনকে কীভাবে পণ্য বানানো হয়।

রেজ বেইট-এর বিকাশ

রেজ বেইট শব্দটি আসলে নতুন নয়। ২০০২ সালে প্রথম তার ব্যবহার পাওয়া গেছে একটি ইউসেনেট পোস্টে, যেখানে গাড়ি চালকদের রাগান্বিত আচরণ বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি অনলাইন সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে।

আজ রেজ বেইট শুধু সোশ্যাল মিডিয়া‑ই নয়; সংবাদ মাধ্যম, ব্লগ, ভিডিও চ্যানেল, এমনকি ব্যক্তিগত পোস্টেও দেখা যায়। ইউকে নিউজ ইয়াহু বলছে, বারবার ‘প্রোভোকেটিভ, ডিভাইসিভ ও ম্যানিপুলেটিভ কনটেন্ট’ তৈরি হয়, যার লক্ষ্য মানুষের মধ্যে রাগ তৈরি করে ক্লিক, শেয়ার ও কমেন্ট আয় করা।

আমাদের করণীয় কী?

>> এই অবস্থা নতুন নয়, তাই আমাদের সচেতন থাকাটাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। তাই কোনো পোস্ট দেখলে প্রথমে থামুন, তার উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করুন।

>> শেয়ার বা কমেন্ট করার আগে একটু ভাবুন - আপনার কনটেন্ট কি বলছে, এতে অন্যদের ওপর কী প্রভাব পড়বে।

>> তথ্য যাচাই করুন। সোর্স, ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রমাণ - সব দেখুন।

>> রেগে ছুটে গিয়ে রিপ্লাই না করে যুক্তি দিয়ে ভাবুন, দরকারে বিরতি নিন।

>> অনলাইনে এধরনের কনটেন্ট মিউট করুন, রিপোর্ট করুন।

রেজ বেইটের জনপ্রিয়তা শুধু ভাষার পরিবর্তন নয়। এটি আমাদের সামাজিক ও মানসিক জীবনের একটি প্রতিফলন। যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে আমাদের রাগ, ক্ষোভ, বিভাজন - সবই অনলাইনে পণ্য হয়ে যাবে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, জিমনেটওয়ার্ক, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ইউরোনিউজ, মানিকন্ট্রোল, ইউকে নিউজ ইয়াহু

এএমপি/এমএস