জাতীয়

নিউমুরিং টার্মিনাল রক্ষায় পদযাত্রা ও মশাল মিছিল

চট্টগ্রাম বন্দরের অত্যাধুনিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়ার প্রস্তাবের প্রতিবাদে পদযাত্রা ও মশাল মিছিল করেছে বন্দর রক্ষা পরিষদ।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) নগরের হালিশহরের পোর্ট কানেকটিং রোডের ওয়াপদা মোড় থেকে বড়পোল মোড় পর্যন্ত এ মশাল মিছিল করে পরিষদ।

মিছিল শেষে সমাবেশে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি একটি আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ টার্মিনাল। বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতি ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারে গড়ে ১৬৫ মার্কিন ডলার আয় করে থাকে, যেখানে টার্মিনাল অপারেটরকে খরচ বাবদ দেওয়া হয় মাত্র ১০ ডলার এবং অন্যান্য খাতে খরচ হয় প্রায় ৪০ ডলার। ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিট আয় প্রায় ১০০ ডলার।

তারা বলেন, যদি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য লিজ দেওয়া হয় এবং তারা শুধু ৫০ ডলার বাংলাদেশকে দেয়, তবে প্রতি কনটেইনারে ৬৫ ডলার বিদেশে চলে যাবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বিদেশি প্রতিষ্ঠান টার্মিনালটি পরিচালনা করলে বছরে দেশ থেকে প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিদেশে বেরিয়ে যাবে—যা দেশের ডলার রিজার্ভের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। ট্যারিফ বাড়লে এ অর্থ আরও দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা বন্দর ব্যবহারকারীদের।

বক্তারা বলেন, ভিয়েতনামের কাই মেপ-থাই বন্দরের ৭টি টার্মিনালের কোনোটিই এককভাবে বিদেশি অপারেটরের হাতে নয়। সব টার্মিনাল স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত। সিঙ্গাপুরের তিনটি প্রধান টার্মিনালই সম্পূর্ণভাবে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ নিজেই পরিচালনা করে। অথচ বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে, যা সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি, এনসিটিকে বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ উল্লেখ করে বক্তারা কোনো পক্ষের প্রভাব বা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় সম্পদ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে না দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান।

বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমানে আরএসজিটি পরিচালিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) একটি কনটেইনার ডেলিভারি পেতে ৪৮-৭২ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে, যার ফলে সিঅ্যান্ডএফ কর্মী ও আমদানিকারকরা মারাত্মক হয়রানি ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

ব্যর্থতার দায়ে পিসিটির লিজ বাতিল করে পুনরায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টার্মিনাল পরিচালনা করার দাবি জানান তারা।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বন্দর রক্ষা পরিষদের আহবায়ক আবু সাইদ হারুন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার প্রধান সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি নুরুল আবছার মজুমদার স্বপন, চট্টগ্রাম বন্দর মার্চেন্ট শ্রমিক ইউনিয়নের মোহাম্মদ হোসেন, মো. জাহিদ, ডক বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের আবদুল জলিল, মেরিন কন্ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের ফরিদুর রহমান ও চট্টগ্রাম পোর্ট এজেন্টস অ্যান্ড কন্ট্রাক্টর এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের আবদুর রশিদ প্রমুখ।

এমআরএএইচ/এমকেআর/এমএস