দেশজুড়ে

মাছ ধরার মহাৎসবে বাইছিলরা

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া নন্দকুজা নদীতে চলছে পলো দিয়ে মাছ ধরার মহাৎসব। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষে গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ পলো দিয়ে মাছ ধরার মহাৎসবে মেতে উঠেছে। আর পলো দিয়ে যারা মাছ ধরে তাদেরকে বলা হয় বাইছিল।বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার প্রায় ২ মাস পরে নদী, নালা, খাল, বিল, জলাশয়ের পানি যখন শুকিয়ে যেতে থাকে তখন থেকেই পলো বাইছিলরা লম্বা লাইন ধরে নদী হতে শইল, বোয়াইল, রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, গজার, জাপানীসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে। তীব্র শীত অপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক বুক পানিতে নেমে তারা মাছ ধরে। ওই সময় এলাকার ছোট বড় সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের নদীর দুই তীরে লাইন বেধে মাছ ধরার দৃশ্যটি উপভোগ করতে দেখা যায়।স্থানীয়রা জানায়, এই বাইছিল দলের একজন সরদার থাকে। সবাই তাকে সম্মান করে এবং তার দিক নির্দেশনা মানে। চরকাদহ গ্রামের আলী হামজা এই বাইছিল দলের প্রধান সরদার।সরদার আলী হামজা জানান, প্রতিটি গ্রামে একজন করে সরদার রাখা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক মোবাইলের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আলোচনার মাধ্যমে কখন কোন নদী, বিল জলাশয়ে মাছ ধরতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেই আমরা একত্রিত হয়ে মাছ ধরতে যাই।শিধুলী গ্রামের বাইছিল দলের সরদার শ্রী অমল অধিকারী জানান, আমরা ছোট বেলা দেখেছি আমাদের বাপ চাচারা পলো দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ শিকার করে নিয়ে এসেছে। সেই ঐতিহ্য এবং ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করে চলেছি।তিনি আরো বলেন, হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই আমাদের মধ্যে ধর্মের কোনো ব্যবধান নাই, আমরা একত্রিত হয়ে মাইলের পর মাইল রাস্তা পায়ে হেটে মাছ ধরতে যাই।সাইকোলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ নজরুল ইসলাম তিনিও ওই বাইছিল দলের সদস্য। তিনি বলেন, দুই একটি মাছ ধরার জন্য সারাদিন ধরে পলো চাপাই আর বলি আল্লাহ আল্লাহ রাসুল বলো এই প্রতিধ্বনি দিয়ে এগিয়ে চলি।এলাকার সুধী সমাজ তাদের এই ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ ধরার প্রতি আগ্রহের দৃশ্য দেখে প্রতিনিয়ত উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে যাচ্ছেন। এমএএস