জয়পুরহাট সদর উপজেলার প্রত্যন্ত ও ভারত সীমান্ত ঘেঁষা কল্যাণপুর গ্রাম। এই গ্রামের নামানুসারে কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দুই যুগ ধরে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। শিশু, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম এই ৬টি শ্রেণির ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর সব কটি বিষয় ভিত্তিক ক্লাস নেয়া ছাড়াও দাফতরিক কাজ সবই করতে হয় এক শিক্ষককেই। মাঝে মধ্যে দুই-একজন শিক্ষককে প্রেষণে (ডিপোটেশনে) পাঠানো হলেও কাঁচা রাস্তা-ঘাটসহ খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কেউ থাকেন না বেশি দিন। ফলে এক শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম।জেলা শহর থেকে ২২/২৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার ০১ নং ধলাহার ইউনিয়ন, ডাকঘর-কড়িয়া, ক্লাস্টার-বিষ্ণুপুর, জে এল নং-০১, বিদ্যালয় নং-০৯ এবং বিদ্যালয়টি বি গ্রেডের।১৯৫৭ সালে শিক্ষানুরাগী কিছু এলাকাবাসীর দানে ৪৯ শতক জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯৯৪ সালে মূল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৫০ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে-২৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে-২৯ জন,দ্বিতীয় শ্রেণিতে-২১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে-২৪ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে-২৭ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে-২৪ জন। ২০১৬ সালে ১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৭ জনই পাশ করে। এর মধ্যে একজন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।বিদ্যালয়ে ১৯৭৮ সালে নূরুন্নাহার নামে একজন শিক্ষিকা যোগদান করেন। তারপর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাধ্য হয়েই তিনি বিদ্যালয় সংলগ্ন গ্রামের একজনকে বিয়ে করেন।পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তিনিই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে গেলে এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি।পর্যায়ক্রমে প্রেষণে (ডিপোটেশনে) শাহীন হোসেন তিন মাস, মাহফুজার রহমান ছয় মাস এই রকম অনেক শিক্ষককে সেখানে যোগদান করলেও কেউই বেশি দিন বিদ্যালয়ে থাকেন না। সর্বশেষ জতীন মুর্মূ নামে একজন শিক্ষককে এ বিদ্যালয়ে দেয়া হলে তিনিও ২০১৬ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর দেড় বছরের জন্য প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এ ট্রেনিংয়ে চলে যান। ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে গ্রামের অনার্স পড়ুয়া দুইজনকে প্যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তারা মাঝে-মধ্যেই তাদের ক্লাসের ফাঁকে বিদ্যালয়ের ক্লাস পরিচালনা করেন।বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আহসান হাবিব, ছাত্রী সাবিনা বেগম ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার বলেন, একজন শিক্ষকই বাংলা, ইংরেজী, অংক সব বিষয় পড়ান। আমাদের আরও শিক্ষক লাগবে।বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রুমিত হাসানের বাবা ময়জুল হোসেন, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র কিরণ চৌঃয়ের বাবা কামাল হোসেন চৌঃ, প্রথম শ্রেণির ছাত্র সোহান বাবুর বাবা এরশাদ আলীসহ অনেক অভিভাবক বলেন, আমরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেখি আসছি শিক্ষক আসে, শিক্ষক যায়। কেউ দীর্ঘদিন থাকেন না। স্কুলে যোগদান করার দুই-তিন মাসের মধ্যে তদবির করে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যান।বিদ্যালয়ের এসএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, বার বার অফিসে যোগাযোগ করার পরও শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় না। ফলে আমাদের কোমলমতি শিশুদের লেখা-পড়ার প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকসহ আরও কমপক্ষে ৩ জন শিক্ষকের প্রয়োজন আমাদের প্রতিষ্ঠানে।কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কোনো শিক্ষক এখানে আসতে চান না, আসলেও তদবির করে চলে যান সুবিধামত স্কুলে। জয়পুরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, স্কুলটিতে যতদ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। আরএআর/পিআর