দেশজুড়ে

৬৮ বছর পতাকা পেল নীলফামারীর ছিটবাসী

নীলফামারীর চারটি ছিটমহলে শনিবার প্রথম প্রহরে (শুক্রবার ১২টা ১ মিনিট) সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তোলন করা হয়েছে জাতীয় পতাকা। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ছিটমহলগুলোতে চলে আনন্দের বন্যা। শনিবার সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চারটি ছিটমহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বড়খানকীবাড়ি গিদালদহ ছিটমহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নীলফামারীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুজিবুর রহমান, নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য  মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার। এসময় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের বড়খানকী ছিটমহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা এসএম সফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন। এসময় ওই ছিটমহলের ২১ পরিবারে ৮৯ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গয়াবাড়ী ইউনিয়নের বড়খানকীবাড়ী খারিজা গীতালদহ ছিটমহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এমদাদুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন। এসময় উক্ত ছিটমহলের ৮টি পরিবারের ৪২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের নগর জিগাবাড়ি ছিটমহলের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জেএ সিদ্দিক, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন। এসময় উক্ত ছিটমহলের ৪৫টি পরিবারের ২২০ জন উপস্থিত ছিলেন। ছিটমহলগুলোতে উৎসবের জন্য তৈরি হয়েছেন সবাই। ১ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনেটের প্রথম প্রহরে ৪টি ছিটমহলে রাতে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালানো, আতশবাজি, ভুড়ি ভোজ, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে ৬৮ বছরের বন্দী জীবনকে স্মরণীয় করে রাখেন ছিটমহলবাসীরা। প্রশাসন থেকে ছিটমহলগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।একই সঙ্গে ঘরে ঘরে জ্বলে উঠে ৬৮টি করে মোমবাতির আলোর ঝলকানি। শনিবার পহেলা আগস্ট সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হবে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা।  বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরার মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমানা চুক্তি (এলবিএ) এবং ২০১১ সালের প্রটোকল অনুযায়ী উভয় দেশের ছিটমহল বিনিময় বাস্তবায়ন হয়েছে। সে অনুযায়ী গত শুক্রবার মধ্যরাতে দুই দেশের মধ্যে ভূমি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হবে। ১ আগস্ট প্রথম প্রহর থেকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। একই সঙ্গে ভারতের ভেতরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। উভয় দেশের অপদখলীয় জমিও ভারতের অন্তর্ভূক্ত হবে বলে ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এদিকে বাংলাদেশে নতুনভাবে অন্তর্ভূক্ত জমি সংযুক্ত করে এবং বহির্ভূত জমি বাদ দিয়ে একটি গেজেট নোটিফিকেশন জারি করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভূক্ত ছিটমহলগুলোতে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক হিসেবে থাকার সুযোগ প্রদানকারীরা ছাড়া অন্যান্যরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। আর ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হলেন।রাতে নগর জিগাবাড়ি ছিটমহলের বাদ্যযন্ত্র জানিয়ে ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে অনিন্দ সুন্দর করে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে। তারা এসময় বন্দিদশা থেকে মুক্তি নগর জিগাবাড়ী লিখে (ছিটমহল কেটে দিয়ে) বাংলাদেশ লেখেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, ওসি রহুল আমিন খান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীনসহ ছিটমহলের বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।শনিবার সকালে বড়খানকীবাড়ি গিদালদহ ছিটমহলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ছিটমহলবাসীদের রজনিগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুজিবুর রহমান, নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাক্তার আব্দুর রশিদ আকন্দ, ম্যাজিস্ট্রেট ফুয়ারা খাতুন, ম্যাজিস্ট্রেট সুজন সরকার, নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, ভাইস চেযারম্যান মজিবর রহমান প্রমুখ।জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/এমএস