সত্য ও সুন্দরের অনন্য জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে মানুষের সবচেয়ে বেশি কামনা ও বাসনার বস্তু যৌন জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ খুব বেশি জরুরি। তাই নিরপরাধ ও কলুষমুক্ত সমাজ উপহার দিতে জীবন ও যৌনতার আবশ্যকতাকে ইসলাম অকপটে স্বীকার করে।
জীবন ও যৌনতার বাস্তবতাকে স্বীকার করতে গিয়ে পাশবিক নির্যাতন ও বিশৃঙ্খলাকে ইসলাম সমর্থন করেনি। তাইতো যৌনতা নির্ভর চরম জাহেলিয়াতের যুগে যাবতীয় উশৃঙ্খলতাসহ বিশ্ব মানবতাকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসতে পৃথিবীতে পবিত্র কুরআনসহ আগমন করেছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
শুধু যৌনতা সম্পর্কেই নয় বরং কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা, স্বভাব-চরিত্রসহ সর্বক্ষেত্রেই তিনি দিশেহারা মানুষকে দেখিয়েছেন সঠিক পথ। যৌনতাকে পাশবিকতায় না নিয়ে মানব বংশ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে গুরুত্ব দিয়ে পাশবিক উন্মাদনায় নিজেদের উদ্বুদ্ধ না করতে চালু করেছেন বিশুদ্ধ বিয়ে প্রথা।
ইসলাম সম্মতভাবে নারীদের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান দেয়ার জন্য বিয়েকে যৌনতার উত্তম ব্যবস্থা হিসেবে বিশুদ্ধ চুক্তির ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি যে সব কারণে যৌনস্খলনের সৃষ্টি হয়, সেসব বিষয়ে প্রতিবিধান তথা সমাধান দিয়েছে ইসলাম।
এক কথায় নারী-পুরুষের যৌন চাহিদা পূরণের আয়োজনকে বিয়েনামক চুক্তির মাধ্যমে একেবারেই সহজ করে দিয়েছে ইসলাম। সভ্য ও বিশুদ্ধ যৌন জীবনের পথে চলতে মানুষকে বিয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে বিয়েতে খরচ কম ও সহজ; সে বিয়েই বরকতময়।’ (বায়হাকি)
সুতরাং যে সময়টিতে নারী-পুরুষ যৌনতার মাদকতায় আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি সে সময়টিতে নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি ইসলামের সুমহান নির্দেশ বিয়েনামক চুক্তির প্রতি গুরুত্বারোপ করা একান্ত প্রয়োজন। তবেই নারী-পুরুষ উভয়েই যৌন জীবন সম্পর্কে সজাগ ও সচেতনতার পাশাপাশি পবিত্র জীবন লাভ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বিয়ে সম্পাদনের ফলে যুবকদের দৃষ্টি অবনত থাকবে এবং গুপ্তাঙ্গ থাকবে পবিত্র।’
মনে রাখতে হবে
যে যৌন ক্ষমতার যথার্থ প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল মানব অস্তিত্ব ও তার পবিত্রতা, সে যৌনতার ব্যাপারে অপবিত্রতা তথা পাশবিকতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইসলাম।
লোভাতুর দৃষ্টি ও অবাধ মেলামেশা যেহেতু যৌনাপরাধের মূল উৎস, তাই এগুলোকে ইসলাম পরিষ্কারভাবে নিষেধ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন > যেসব ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে বিয়ে করা নিষিদ্ধ
সুতরাং সুস্থ ও সুশৃঙ্খল পথে যৌন কামনা পূরণের লক্ষ্যে বৈধ পন্থায় মানব বংশ বৃদ্ধির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়। তারা হলো- আজাদি চুক্তিবদ্ধ গোলাম- যে তার রক্তমূল্য আদায় করতে চায়, পবিত্রতার লক্ষ্যে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি এবং আল্লাহর পথের মুজাহিদ। (তিরমিজি)
যৌন জীবনের যাবতীয় অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে বিয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই যৌবনে আল্লাহর ওপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে বিয়ে করাই জরুরি। যারা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হবে, তাদের সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়।
কারণ-
- বিয়ের মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দা আল্লাহর সমীপে পবিত্র ওয়ে ওঠার পথ খুজে পায়।
- বিয়ে করা সব রাসুলদের সুন্নাত এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শ। আর তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নেও রয়েছে রহমত ও বরকত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যৌন জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করে যৌনতার পাশবিকতা ও বিশৃঙ্খলা থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করতে বিয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি