কক্সবাজার সদরের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী উত্তর মুহুরীপাড়ার পঞ্চাশ একর ফসলি জমি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। আবাসন প্রকল্প গড়তেই আইন উপেক্ষা করে রাতে-দিনে তিনটি ফসলি জমি ভরাট করছে এক ভূমিদস্যু চক্র।
শতাধিক কৃষক পরিবার তাদের ফসলি জমি ভরাট থেকে রক্ষায় জেলা প্রশাসক, কৃষিবিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা।
অথচ ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার’ আইনে ফসলি জমি ভরাট করে কোনো স্থাপনা বা আবাসন প্রকল্প বা শিল্প কারখানা গড়ে তোলার কোনো সুযোগ নেই। কক্সবাজার কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ভরাট রোধে উপযুক্ত আইন পাচ্ছে না বলে- দাবি করলেও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।
কক্সবাজার সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, মধ্য ঝিলংজা ব্লকের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী প্রায় ৬০ একর জমি অতি উর্বর ভূমি। এসব জমিতে আমন ও বোরো মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার মণ (৪০ হাজার আরি) ধান উৎপাদন হতো। এসব ধানের বিক্রি মূল্য দাঁড়াত প্রায় এক কোটি টাকা।
পাশাপাশি আমন মৌসুমে ধানের পাশাপাশি কলমি শাক, কচুর লতি, ঢেরশসহ নানা সবজি এবং বোরো মৌসুমে বাধা কপি, ফুল কপি, মরিচ, টমেটো, বরবটি, আলু, শিম, চিচিঙ্গা, শসা, ফেলন, ফরাশ বিন, মিস্টি কুমড়া, খিরা, লাউ, লালশাক, পালংশাক, পুই শাক, ডাটা শাক আগাম চাষ হতো। এসব সবজি বেচে আয় হতো প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আবদুর রহমান, সাজেদা বেগম, মনিরুল আলম, জাহেদা বেগম, জাফর আলম, কামরুল ইসমাইলসহ ৩৩ জন এক লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, এ এম জি ফেরদৌস তাদের তিন ফসলি জমিগুলো জোরপূর্বক ভরাট করছেন। আবাসন প্রকল্প গড়তে বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে থাকা জমির পর এখন বসতবাড়ির লাগোয়া জমিও ভরাট করা হচ্ছে।
তারা আরও জানান, কিছু বললে জমি কিনে নেয়ার কথা বলছেন ফেরদৌস। ফসলি জমি বিক্রি করবেন না বলার পরও ভূমিদস্যুরা গায়ের জোরে মাটি ভরাট অব্যাহত রাখতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত ও জেল ফেরত সন্ত্রাসীদের এনে পাহারায় বসিয়েছেন। ফলে গত কয়েক মৌসুমে এই জমিগুলোতে কোনো ধরনের চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আইনকে না মেনে ফসলি জমি ভরাট হলেও সংশ্লিষ্ট কোনো দফতর তার বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। উল্টো প্রতিবাদ করা জমির মালিকরা মিথ্যা মামলার শিকার ও অব্যাহত হুমকিতে দিনযাপন করছেন বলে অভিযোগ জানান তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এ এম জি ফেরদৌসের মুঠোফোনে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁকখালী খাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে কৃষি জমিতে রাখা হয়েছে। একাধিক এসকেভেটর দিয়ে এসব বালু শতাধিক ফসলি জমিতে ছড়িয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতিক উল্লাহ বলেন, মধ্য ঝিলংজা ব্লকে ভরাটরত জমি অতি উর্বর। এভাবে কৃষি জমি ধ্বংস হলে জেলায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা রয়েছে। আমরা পরামর্শ দিতে পারলেও কাউকে বাধা দিতে পারি না।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আকতার সুইটি বলেন, ‘কেউ জমি ভরাট করলে তা রদ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো’।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় কিছু লোকের লিখিত অভিযোগ পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কৃষি জমি ভরাট করে কোনো আবাসন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে না’।
সায়ীদ আলমগীর/এসএমএম/জেআইএম