উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে যমুনা ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। ভরা মৌসুমে যেখানে পানিতে টইটম্বুর ছিল আজ সেখানেই ধু ধু বালুচর। সময়মতো খনন না করায় যমুনা নদী কোনো কোনো জায়গায় নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচি কাজীপুরের মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, মনসুরনগর, চরগিরিশ ও নিশ্চিন্তপুরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা রাক্ষসী যমুনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। জমির মালিকরা জেগে ওঠা বালুচরে বাদাম, কলাই, সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় চৌহালী উপজেলার ঘোরজান এলাকার কৃষক আনছার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শীত এলেই নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। ওই জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করি। আর বর্ষা মৌসুমে পানি পরিপূর্ণ থাকে, তখন জমিজমার কোনো হদিস থাকে না।
একই এলাকার কৃষক মোস্তফা বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে চলি। তবুও যোগাযোগের ব্যবস্থা ভালো থাকে। এখন যমুনা মরাখালে পরিণত হয়েছে। জেগে উঠেছে অসংখ্য জমি। চাষাবাদ হলেও যোগাযোগের ব্যবস্থা খুব খারাপ।
তিনি আরও বলেন, এবার যমুনার বুকে তার ৯ বিঘা জমি জেগে উঠেছে। সেখানে সরিষার আবাদ করেছি। আবাদ বেশ ভালো হয়েছে।
অপরদিকে পানি কমে যাওয়ায় নৌ-শ্রমিক এবং জেলারা বেকার হয়ে পড়েছেন।
কাজীপুরের নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের জেলে পরিমল দাস বলেন, এখন খরার মৌসুম, পানি নেই। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পলিতে নদী ভরাট হয়ে গেছে। এখন আর জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই। ভরা মৌসুমে আবার মাছ ধরায় নেমে পড়বো।
মেঘাই নৌ-ঘাটের শ্রমিক বাদশা ও হাসান আলী বলেন, বিশ বছর আগে থেকে মেঘাই ঘাটে শ্রমিকের কাজ শুরু করি, আজও করছি। শীতকালে যমুনা নদী বিভিন্ন শাখা এবং নালায় পরিণত হয়েছে। এখন নৌকা ঠিকমতো ঘাটে আসতে পারে না। আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তা করছি।
চৌহালী সদরের নৌ-ঘাটের ইজারাদার নায়েব আলী জানান, শীতের শুরু থেকে পানি কমতে থাকে। এখনতো খরার মৌসুম। নদীর বুকে বালুচরে ভরে গেছে। ঘাটে আর নৌকা আসতে পারে না। ঘাট থেকে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে যাত্রীদের নামানো হয়। যাত্রীরা হেঁটে যার যার গন্তব্যস্থলে যান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ভরা মৌসুমে ভয়ে থাকি কখন কোথায় ভেঙে পড়ে। কিন্তু এখন পানির স্রোত নেই, ভাঙনের চিন্তাও নেই। তবে ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে সংস্কার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকতা মো. আবু হানিফ জানান, যমুনায় গতবারের চেয়ে এবার অনেক বেশি জমি জেগে উঠেছে।
এফএ/এমএস