শেষ হয়েছে ঈদের সরকারি ছুটি। ঈদের তৃতীয় দিনেই খুলেছে বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঢাকায় ফেরার তোড়জোড়। তবে ফাঁকা ঢাকায় নিজ গন্তব্যে যেতে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ কম। বাস থেকে নামার পরই যাত্রীদের ঘিরে ধরছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও বাস কন্ডাকটাররা। দাবি করছেন বাড়তি ভাড়া।
ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি সুরুজ মিয়া তার নয় বছরের মেয়েকে নিয়ে যাবেন দয়াগঞ্জ। কোনো সিএনজিচালকই ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার নিচে যেতে চাইছেন না।
সুরুজ মিয়া বলেন, জ্যামের সময়ই তো আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা ভাড়া দেই। এখন তো রাস্তা ফাঁকা। একশ টাকার বেশি ভাড়া চাইছে। ঈদে যাওয়ার সময়ও বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এখন তো ঈদ শেষ।
একই অভিযোগ সাতক্ষীরা থেকে আসা আরেক যাত্রীর। তিনি বলেন, একশ থেকে দেড়শ টাকা বেশি দাবি করছেন চালকরা। তারা বলছেন- ঈদ বাজারে ভাড়া এমনই। ঈদে যাওয়ার সময়ও বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এখন তো ঈদ শেষ। এখন বাড়তি ভাড়া কেন?
মাগুরা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ জানান, মোটরসাইকেলেও দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। গাবতলী থেকে হাতিরঝিল যাওয়ার জন্য চাওয়া হচ্ছে তিনশ টাকা। কিন্তু অন্য সময়ে দেড়শ টাকায় যাওয়া যেতো।
গণপরিবহনে ঈদ বকশিসের নামে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি নিতে দেখা গেছে। এছাড়া যাত্রীর সঙ্গে বক্স বা বড় ব্যাগ থাকলে আরও ২০-৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, গাবতলী বাস কাউন্টার থেকে এক নম্বর পর্যন্ত ১২০ থেকে ১৫০ টাকা চাইছেন রিকশা চালকরা। এছাড়া অন্যান্য দূরত্বে দ্বিগুণ ভাড়া চাইছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
‘ফেরি ঘাটে জ্যামের কারণে দেরিতে আসছে গাড়ি, অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই ঢাকা ছাড়তে হচ্ছে’
পাটুরিয়া, আরিচা ঘাটে যানজটের কারণে গাড়ি ঢাকায় আসতে সময় লাগছে বলে কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়েছে।
ঈগল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সোহাগ উদ্দিন বলেন, দুপুরের মধ্যে আমাদের চারটা বাস এসেছে। অন্য সময়ে সাত থেকে আটটা বাস আসতো। টার্মিনালেও গাড়ি নেই। ফেরি ঘাটে পার হতে বাসগুলোর ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগছে।
গ্রিন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার ওলিউল্লাহ জানান, আরিচা ঘাটে যানজট থাকায় আমাদের চারটা গাড়ির একটাও ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি।
এদিকে, ঈদের তৃতীয় দিনেও অনেককে পরিবার নিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে।
চাকরিজীবী আনোয়ারুল বলেন, অফিসে রোস্টার করে ছুটি হয়েছিল। আমি শেষে পেয়েছি। আমি এখন সাতক্ষীরা যাচ্ছি। পরিবার আগেই পাঠিয়েছি। কিন্তু ঈদের পরও বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
তবে কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়েছে, এখন আর বাড়তি ভাড়া রাখা হচ্ছে না। গতকাল (বুধবার) দুপুর পর্যন্ত যাত্রীর চাপ ছিল। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) আর চাপ নেই। ২০-২৫ সিট খালি রেখেই ছেড়ে যাচ্ছে বাস।
‘ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে’
খুলনার হরিণাকুন্ডু থেকে আসা ইকরাম হাবিবের দাবি এবারে ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ২৮ তারিখ বাড়ি গেয়েছি, কোনো যানজট পাইনি। আসার সময়েও নির্বিঘ্নে আসতে পেরেছি। ঈদযাত্রায় এতো শান্তি কখনই পাইনি।
যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটি লম্বা হওয়ার কারণে যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে গিয়েছেন। তাই এবার তেমন যানজট হয়নি। যাত্রীরাও ঝঞ্ঝাট ছাড়া ঈদ যাত্রা করতে পেরেছেন।
এসএম/আরএডি/জিকেএস